৩০ শয্যার হাসপাতালটিতে সব সময়ই ভিড়। কেউ প্রসূতি, কেউ বা অন্য রোগে আক্রান্ত। কিন্তু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেই নিশ্চিন্ত হতে পারেন না তাঁর পরিবার। চিন্তা, দু’বেলা খাবার পৌঁছে না দিলে না খেয়ে থাকতে হবে তাঁর ঘরের লোকটাকে। কারণ গত আট মাস ধরে রোগীদের খাবার সরবরাহ বন্ধ দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। আট মাস ধরে কার্যত হাঁড়িই চড়েনি সেখানে। রোগীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো সত্ত্বেও আশ্বাসই মিলেছে শুধু। বাসুদেবপুরের রূপালীদেবী সোমবার ভর্তি হন হাসপাতালে। সদ্য মা হওয়ার পরেও বাইরের খাবারই ভরসা তাঁর।
বিষয়টি জানেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেই। এমনকী সরকারি ভাবে রোগী কল্যাণের জন্য গঠিত রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যদেরও অজানা নয় বিষয়টি। এই সমিতিতে রয়েছেন স্থানীয় বিডিও, এলাকার বিধায়ক। ফলে তাঁরাও জানেন সবটা। অথচ কেন দ্রুত পদক্ষেপ করে সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না, তার সদুত্তর নেই কারও কাছে। ফলে ৩০ শয্যার ওই হাসপাতালে ইনডোরে ভর্তি থাকা রোগীদের বাড়ি থেকে বা নিজের টাকা দিয়ে হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে খেতে হচ্ছে। অথচ সরকারি নিয়মানুযায়ী ভর্তি থাকলেই সেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে খাবার সরবরাহ করার কথা।
এই হাসপাতালের উপর দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর, সড়বেড়িয়া ১ ও ২, নন্দনপুর ১ ও ২, পাঁচবেড়িয়া, দাসপুর ১ ও ২-সহ দশটি পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ নির্ভরশীল। এছাড়া দাসপুর ২ ব্লকের একাধিক গ্রাম থেকেও রোগীরা চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রতি মাসে গড়ে আড়াইশো থেকে তিনশো রোগী ভর্তি হন এবং গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী ভর্তি হন। অথচ এখানেই দীর্ঘ আট মাস ধরে খাবার বন্ধ থাকলেও তাতে প্রশাসনের হুঁশ নেই বলে অভিযোগ রোগীদের। এমনকী খাবারের দাবিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যদের কাছে রোগী ও রোগীর আত্মীয়েরা বারাবার আবেদন-অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।
গত সোমবার স্বাস্থ্য প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সদস্যেরা দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালেও এসেছিলেন। তাঁদের কাছে রোগীরা এবং স্থানীয় মানুষ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। পরিদর্শনে আসা কেন্দ্রীয় দলটি অবশ্য সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন।
কিন্তু আট মাস ধরে কী ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর? রোগী কল্যাণ সমিতিই বা কী ব্যবস্থা নিয়েছে? পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রের জবাব, “ওই হাসপাতালে খাবার সরবরাহের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। এক ঠিকাদার দায়িত্বও পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কাজ করেননি। ফলে আপাতত খাবার সরবারাহ বন্ধ।” হাসপাতালে বিএমওএইচ সুদীপ ঘোড়ুই বলেন, “রোগীদের খাবার না পাওয়ার বিষয়টি খারাপ লাগছে। আমরা সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে স্থানীয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে খাবার সরবারাহের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই গোষ্ঠীও কোনও যোগাযোগ করেনি। ফলে খাবার দেওয়ার সমস্যা রয়েই গিয়েছে।”
কিন্তু আট মাস ধরে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন। সুদীপবাবুর সাফাই, “দেখছি কী করা যায়।” এলাকার বিধায়ক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য মমতা ভুঁইয়ার জবাবেও একই সুর। তিনি বলেন, “এ নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি।”
এলাকার বিধায়ক প্রতিনিধি সুনীল ভৌমিক বলেন, “আমরা সমস্যা মেটানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।” আর বিডিও রোশনি সরকারের আশ্বাস, “যাতে দ্রুত হাসপাতালে খাবার দেওয়া চালু যায় তার উদ্যোগ করা হয়েছে।”
এই হাসপাতালের উন্নয়নে রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে বছরে লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ হয়। তাহলে প্রশ্ন, ঠিকাদার বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ঠিক করা না হলে কর্তৃপক্ষ রোগী কল্যাণ সমিতির টাকায় অস্থায়ী ভাবেও রোগীদের খাবারের ববস্থা করেননি কেন? তবে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন সকলেই।
এখন সকলের আশ্বাসই ভরসা রোগীদের। |