আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ
নড়বড়ে গোড়া থেকেই ব্যাধিগ্রস্ত দাঁতের হাসপাতাল
বিষয়টি অনেকটাই নটে গাছ মুড়োনোর সেই ছড়ার মতো।
রাজ্যের প্রধান ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে এক্স-রে বন্ধ, স্টোরে জিনিসপত্র প্রায় শূন্য, বন্ধ ইন্টারনেট, সার্ভারও ডাউন, আউটডোর টিকিট কম্পিউটারে লেখা হচ্ছে না, টেলিফোন বিকল, এমনকী বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠিও এসে গিয়েছে।
কেন এমন হাল? কারণ, গত তিন-চার মাস কাউকে টাকা দেওয়া হয়নি। জিনিসপত্র কেনার দরপত্র ডাকাও বন্ধ রয়েছে। কেন টাকা দেওয়া হয়নি? কারণ, টাকা থাকলেও হাসপাতাল-সচিব কোনও চেক সই করতে চাননি। অন্য দিকে, নতুন দরপত্র কমিটি এসে পুরনো সব দরপত্র বাতিল করে দিয়েছে।
কেন চেক সই হয়নি? কারণ সচিব জানাচ্ছেন, সই না করাটা তাঁর ইচ্ছা। আর দরপত্র কমিটির যুক্তি, আগের দরপত্র ডাকায় দুর্নীতি ছিল। তা হলে গত দু’তিন মাসে সেই খবর স্বাস্থ্য দফতরে গেল না কেন? কারণ, স্বাস্থ্য দফতরে খবরটা জানানোর লোক নেই।
কেন নেই? কারণ, হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু মজুমদার বেশির ভাগ সময়ে হাসপাতালে থাকেননি। যেহেতু তিনি ‘ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র প্রধান, তাই রাজ্যের বাইরেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। আর এই সব কিছুর নিট ফল হাসপাতালের ভেঙে পড়া পরিকাঠামো এবং প্রতি দিন রাজ্যের দূর-দূরান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার রোগীর চরম হেনস্থা।
আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে গিয়ে দেখা গেল, ভিড়ে ভর্তি আউটডোরে একের পর এক রোগীর এক্স-রে লিখছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু হাসপাতালে এক্স-রে হচ্ছে না। দুর্ঘটনায় চোয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে এমন রোগীকে নিয়েও বাড়ির লোককে এক্স-রে করাতে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি জায়গায়। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ডায়গনস্টিক ক্লিনিকের এজেন্টরা। দিশাহারা রোগীর আত্মীয়ের কাছে গিয়ে নিচু গলায় কী সব বুঝিয়ে সেই এজেন্টরা সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের সুপার প্রদ্যোৎ বিশ্বাস বললেন, “ফিল্ম নেই বলে হাসপাতালে দু’টি সাধারণ এক্স-রে মেশিন চালানো যাচ্ছে না। যে সংস্থা ফিল্ম সরবরাহ করত, তাদের গত তিন মাস টাকা দেওয়া হয়নি। কারণ, হাসপাতালের সচিব নিমাইচাঁদ সামন্ত কোনও চেক সই করছেন না। হাসপাতালে কয়েক কোটি টাকার দু’টি ‘অর্থোপ্যান্টোগ্রাফ’ যন্ত্র আছে। এই অত্যাধুনিক এক্স-রে যন্ত্র রাজ্যের আর কোনও সরকারি দাঁতের হাসপাতালে নেই। সে দু’টিও খারাপ। সম্প্রতি অপেক্ষাকৃত নতুন যন্ত্রটি সারানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সচিব তার জন্যও চেক সই করেননি। অথচ, এই এক্স-রে বাইরে থেকে করতে গরিব রোগীদের ৪০০-৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে।”
সুপার আরও বলেন, “টেলিফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার সবই টাকার জন্যই বিকল। স্টোরে দাঁত অবশ করার ইঞ্জেকশন, দাঁত বাঁধাইয়ের সরঞ্জাম, তার, দাঁত ফিলিংয়ের সামগ্রী সব শেষ হওয়ার মুখে। চেক সই না হলে কিছুই কেনা যাবে না। চার মাসে বিদ্যুতের বিল বাকি পড়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। কারণ, সচিব চেক পাঠাননি। ওরা বলেছে লাইন কেটে দেবে।”
কিন্তু চেক সই করতে সচিবের আপত্তিটা কোথায়? সচিব নিমাইচাঁদবাবু বলেন, “আমার ইচ্ছে। আপনাদের বলতে বাধ্য নই। এখন অডিটে ব্যস্ত আছি। বিরক্ত করবেন না।” হাসপাতালের চিকিৎসক, নতুন দরপত্র কমিটির সদস্য তথা স্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজু বিশ্বাসের অভিযোগ, “এক দিকে সচিব চেক সই করছেন না। অন্য দিকে, দরপত্র ডাকায় এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সেই দরপত্র অনুযায়ী জিনিস কেনা বন্ধ করতে হয়েছে। হাসপাতালের ভাঁড়ার ফাঁকা। কী হবে জানি না।”
এই অবস্থার মধ্যে হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু মজুমদার অবশ্য এখনও রাজ্যের বাইরে। জয়পুর থেকে ফোনে বললেন, “এই সচিবকে নিয়ে আমি পাগল হয়ে যাব। তিন বার কারণ দর্শাতে বলেছি, তা-ও উনি চেক সই করছেন না। ফিরে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।” হাসপাতালের এত অসুবিধা সত্ত্বেও তাঁকে পাওয়া যায় না বলে যে অভিযোগ, তা মেনে নিয়েই দিব্যেন্দুবাবুর জবাব, “আমি এখন ডেন্টাল কাউন্সিলের দায়িত্বে। দেশের ২৯৭টা দাঁতের হাসপাতাল আমাকে দেখতে হয়। শুধু কলকাতায় বসে আর আহমেদ সামলালে হবে না। তাই আমি নিজেই ওই হাসপাতালের পদ থেকে অবসর চেয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.