মেঘে ঢাকা আকাশ। মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে থেকে হাল্কা বৃষ্টি। শীতের আগে এই আবহাওয়া মানুষ ঠিক সইতে না পারলেও রোগ-জীবাণু ও তাদের বাহকদের কিন্তু পোয়াবারো। কারণ তাদের বংশবৃদ্ধির এটাই সব থেকে ভাল সময়। বাহক মশা, মাছি কিংবা প্লাসমোডিয়াম ভাইভাক্স, প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, নিউমোনিয়ার জীবাণু, ডেঙ্গি ভাইরাস, হারপিস জস্টারের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে তাই।
আর তার অবশ্যম্ভাবী ফল, জ্বর-সর্দি-অ্যালার্জি, বুকে সর্দি বসে টান থেকে শুরু করে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, হাম ও পক্সের মতো রোগের আক্রমণ। পুরোদস্তুর শীত আসার আগে এই না-শীত, না-বর্ষা জগাখিচুড়ি অবস্থায় মানুষ কিন্তু কাহিল। কলকাতার বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বারে এবং হাসপাতালের আউটডোরে আপাতত এই রোগীদের সংখ্যাই সব চেয়ে বেশি। |
ভাইরোলজিস্ট অমিয়কুমার হাটি বলেন, ডেঙ্গি, পক্স বা হামের মতো রোগের পরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন নানা রকম ভাইরাসের হামলার আশঙ্কা বেশি থাকে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে ঋতু পরিবর্তনের সময়টা সব চেয়ে খারাপ। খুব সাবধানে থাকতে হবে, যাতে কোনও ভাবে ঠান্ডা না লাগে। ভোরের দিকে বা সন্ধ্যায়, বিশেষ করে মোটরবাইক, সাইকেল চালানোর সময়ে শরীরে হাল্কা একটা সোয়েটার বা কানে-মাথায় মাফলার জড়ানো উচিত।
নভেম্বরের শুরুর দিকটায় গত কয়েক বছর ধরেই ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অমিয়বাবুর বড়বাজারের ক্লিনিকই হোক বা মেডিক্যালের আউটডোর, ট্রপিক্যাল বা চেতলায় পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর ক্লিনিক সবর্ত্রই ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া রোগী বেড়ে গিয়েছে। অমিতাভবাবুর কথায়, “ডেঙ্গি রোগী কমলেও কিছু আছে, সঙ্গে ম্যালেরিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, হাম আর পক্স-ও পাচ্ছি। ডেঙ্গি বা হাম-পক্স সেরে যাওয়ার পরে এই সিজন চেঞ্জের সময়টা ওই রোগীদের অনেকে ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।”
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট বিভূতি সাহা ও নিমাই ভট্টাচার্য জানান, রেসপিরেটরি ভাইরাল ইনফেকশন ও টাইফয়েড নিয়েও অনেকে আসছেন। মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তরফদারের কথায়, “আউটডোরে সর্দি-জ্বর নিয়ে সব চেয়ে বেশি লোক এখন আসছেন। এর পর যত ঠান্ডা বাড়বে, তত আবার স্ট্রোক আর হাঁপানির রোগী বেশি পাওয়া যাবে।” |