নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংগঠন গোছাতে শৃঙ্খলায় গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলা বা ব্লক স্তরে কোথাও যাতে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, তার জন্য আগেও একাধিক বার নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন দলনেত্রী। তবু জেলায় জেলায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব চলছেই। দলীয় কাজিয়ায় যাতে পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খেতে না-হয়, সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার দলের বিজয়া-সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে আরও এক বার কর্মীদের সতর্ক করে দিলেন মমতা।
দলের সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর, জেলা সভাপতি-সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ দিন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ, বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সাংসদদের খুব দ্রুত নিজের নিজের এলাকার কাজ শেষ করতে হবে। যে সব জেলায় এখনও দলীয় কমিটি তৈরি হয়নি, তা দ্রুত তৈরি করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশিই লোকসভা ভোট যে কোনও সময় হতে পারে ধরে নিয়ে দলকে তৈরি হতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কোন জেলার কোন নেতা গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে লিপ্ত কোনও তথ্যই তাঁর অজ্ঞাত নয় বলে বৈঠকে সাফ বলেছেন মমতা। তাঁর নির্দেশ, এলাকায় কাজ করে কোনও নেতা বা সাংসদ-বিধায়ক নিজেকে বিরাট ক্ষমতাশালী যেন না মনে করেন! বরং, মানুষের সঙ্গে মিশে মানুষের জন্য কাজ করায় মন দিতে হবে।
দলীয় নেতৃত্বকে না-জানিয়ে দলের অন্য নেতার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য মমতা এ দিন বৈঠকে মৃদু তিরষ্কারও করেছেন বালি ও জগদ্দলের দুই বিধায়ক সুলতান সিংহ ও অর্জুন সিংহকে। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মেটানোর পরামর্শই দিয়েছেন মমতা। ফের বলেছেন, সংগঠনের ব্যাপারে কোনও সমস্যা হলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি এবং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানাতে হবে। বিধায়কদের কোনও সমস্যা হলে জানাতে হবে পার্থবাবু এবং বিধানসভার সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন সাংসদ সোমেন মিত্র এবং তাঁর বিধায়ক-পত্নী শিখা মিত্র। ছিলেন না সাংসদ সুলতান আহমেদও। আরও কয়েক জন সাংসদ দেশের বাইরে থাকায় আসতে পারেননি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
বৈঠকে কারা উপস্থিত বা অনুপস্থিত, জেলাওয়াড়ি নাম ধরে তার তত্ত্বতালাশও করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বা তাঁর মন্ত্রীরা ছাড়া তৃণমূলের একাংশ যে জেলায় জেলায় দল ও রাজ্য সরকারের কাজের সঠিক প্রচার করছে না, সে ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এবং রাজ্য সরকারের ভাল কাজের খতিয়ান তুলে কালী পুজোর পর থেকে মিছিল-সভা করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
হলদিয়া-কাণ্ড বা ‘তিন কন্যা’র মতো সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ চক্রান্ত করে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন মমতা। সেই জন্য রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান আরও বেশি করে তুলে ধরে জনমত তৈরিতে জোর দিতে বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে কেন্দ্রের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) বা গ্যাসের দামবৃদ্ধির বিষয়কে নিয়ে নাগাড়ে মানুষকে বোঝানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ২২ নভেম্বর থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। ওই অধিবেশনে তৃণমূলের তরফে বিরোধিতার সুর যে চরমে উঠবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা এ দিন বৈঠকে কর্মীদের লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিও শুরু করতে বলেছেন। দলের এক নেতার বক্তব্য, “যে কোনও সময় লোকসভা ভোট হতে পারে, এ কথা নেত্রী বারবার বলেছেন বৈঠকে। সে জন্য সকলকে তৈরি হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও দলের সব নেতা-কর্মীকে পঞ্চায়েত ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূ্ত্রের খবর। রাজ্য থেকে কংগ্রেসের নতুন তিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর মোকাবিলায় এ দিন সুব্রতবাবু ছাড়াও দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায় কেন্দ্র-বিরোধিতায় সরব হন। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বৈঠকের পরে এ দিনই প্রথম দলীয় সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন মমতা। |