নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জমি অধিগ্রহণের সমস্যা এড়াতে এ বার পুণে মডেলে হাঁটতে চায় রাজ্য।
পুণের মগর সম্প্রদায় নিজেদের জমি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেননি। আবার রক্ত ঝরিয়ে স্তব্ধ করে দেননি উন্নয়নের গতিও। ওই জমিতেই আখের বদলে নিজেরা পুঁতেছেন নগরায়নের বীজ। কৃষক তকমা ছেড়ে এখন তাঁরা শিল্পপতি। মগরপট্টা উপনগরীর শেয়ারহোল্ডার তাঁরা। এমনকী অনেকে এখনই কোটিপতিও।
তৃণমূল সরকারের ঘোষিত অবস্থান, শিল্প বা কোনও প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না রাজ্য। একাধিক মালিকের কাছ থেকে জমি কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন লগ্নিকারীরাও। কারণ জমির দাম নিয়ে একমত হতে পারছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতা। পুণে মডেলকে এই সমস্যার সমাধানসূত্র মনে করছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
চলতি মাসের শেষে আবাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামোয় লগ্নি টানতে রাজ্য সরকার ও নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই আয়োজন করছে ‘বেঙ্গল বিল্ডস’। মঙ্গলবার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে এ কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, পুণে মডেলের রূপকার সতীশ মগরকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “ওই মডেল অনুসরণ করে এখানেও কাজ হতে পারে। জমির মালিকরাই প্রকল্পের অংশীদার হবেন। সে ক্ষেত্রে লোকসান হওয়ার ভয় থাকবে না তাঁদের। প্রকল্পও দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।”
পুণেতে নগরায়ন যখন জোরকদমে শুরু হয়, তখন মগরদের ৪০০ একর জমিও সেই পরিকল্পনার অন্তর্গত ছিল। কিন্তু নিজেদের জমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না মগর সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে জমি যে নগরায়নের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা কঠিন হবে, তা বুঝেছিলেন সেই সময়ে ওই সম্প্রদায়ের হাতে গোণা স্নাতকদের একজন সতীশ মগর। নিজেদের জমি অন্যদের হাতে তুলে না-দিয়ে নিজেরাই প্রকল্প তৈরির পথে হাঁটলে, আখেরে লাভ হবে। এই সহজ সত্যটাই ১২০টি পরিবারকে বোঝাতে পেরেছিলেন তিনি।
১৯৯৩ সালে উপনগরী তৈরির পরিকল্পনা মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে জমা দেন মগররা। সরকারি যাবতীয় অনুমোদন পাওয়ার পরে কাজ শুরু হয় ২০০০ সালে। মাত্র ২ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে। পুণে শহরে ৪০০ একর জমির উপর মগরপট্টা উপনগরী। বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০০০ কোটি টাকা। আবাসন, স্কুল, অডিটোরিয়াম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, পার্ক ইত্যাদি তো আছেই। এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক সংস্থার অফিস। তৈরি হয়েছে ৩৫ একরের তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষ আর্থিক অঞ্চল।
পুণেতে মগররা একটি সম্প্রদায় হওয়ার ফলে তাঁদের একজোট করতে সুবিধা হয়েছে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েও মন্ত্রীর দাবি, সার্বিক লাভের কথা বোঝাতে পারলে জমির মালিকদের একত্র করা অসম্ভব নয়। কারণ এ ভাবে এড়ানো যাবে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের বাধাও। হাকিমের দাবি, ছোট ছোট জমির মালিকরা সবাই মিলে একটি প্রকল্পের অংশীদার হবেন। যাঁর যতটা জমি তাঁর অংশীদারিও সেই অনুপাতে থাকবে। কিন্তু জমির মালিকানা পৃথক হওয়ায় ঊধ্বর্র্সীমা আইনের সমস্যা হবে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। অথচ পাওয়া যাবে ‘কালেক্টিভ বারগেনিং’-এর সুবিধা। অর্থাৎ একজোট হয়ে কাজ করার ফলে ঋণ বা অন্যান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন। |