নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আসন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে শাহরুখ খানের পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে আসার কাজে তাঁর উদ্যোগের অভাব ঘটেনি। উৎসবের থালি গার্ল হিসেবে দ্বিতীয় বারের জন্য কোয়েল মল্লিকের নামও বেছে নিয়েছেন তিনি। উৎসবের যাবতীয় খুঁটিনাটিও তিনিই দেখভাল করছেন। কিন্তু দেড় বছরের শাসনকালে সংস্কৃতি নিয়ে যতটা উৎসাহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন, শিল্প নিয়ে তাঁর ততটা মাথাব্যথা আছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে।
প্রশ্নটা আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে আজ, বুধবার বণিকসভা ফিকি-র সভায় মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও শীর্ষ মন্ত্রীর অনুপস্থিতি। শিল্পমহলের একটা বড় অংশ বলছে, রাজ্যের আর্থিক এবং কর্মসংস্থান পরিস্থিতির নিরিখে শিল্পায়নই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একের পর এক নানা ঘটনায় এই বার্তাই যাচ্ছে যে, সরকারের ভাবনা ভিন্ন।
ফিকি-র জাতীয় কর্মসমিতির সভায় প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোই সাধারণ রীতি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে না যেতে পারলে শীর্ষস্থানীয় কোনও মন্ত্রীকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, এ বারও সেই রীতিই মেনে চলা হয়েছিল। কিন্তু যত ক্ষণ না মুখ্যমন্ত্রী কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করছেন, তত ক্ষণ অন্য মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো যায় না। এ বার মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত যখন মহাকরণে ফিকি-কর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় দেন, তখন আর অন্য শীর্ষমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানোর কার্যত উপায় ছিল না বলেই ওই সূত্রের দাবি।
তা ছাড়া, তখন শিল্প দফতরের পক্ষ থেকে বণিকসভার কর্তাদের ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হলদিয়ায় আসন্ন শিল্প সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আর অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এখন বিদেশে। ফলে ফিকি-র অনুষ্ঠান থেকে দূরেই থাকছে রাজ্য সরকার।
পার্থবাবু অবশ্য বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, এটা বণিকসভার কর্মসমিতির বৈঠক। রাজ্য সরকার সেই কর্মসমিতির অঙ্গ নয়। কিন্তু ঘটনা হল, গত বছর এই বৈঠকের পরে সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি এবং অমিত মিত্র। কেন, সেই ব্যাখ্যা এ দিন পার্থবাবু দেননি। বিকেলের দিকে তিনি বলেন, “ফিকি-র তরফে মঙ্গলবার আমাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে যাব। ওঁদের নতুন প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্যরা থাকবেন। তখন ওঁদের সঙ্গে কথা হবে।” যদিও কর্মব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত এ দিন সেই নৈশভোজেও যাননি পার্থবাবু।
সুতরাং শিল্পের প্রতি রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। শিল্পমহলের বক্তব্য, এই ধরনের অনুষ্ঠানে শিল্পপতিদের সঙ্গে সরকারের সরাসরি যোগাযোগ গড়ে ওঠে। যে সূত্র ধরে রাজ্যে শিল্প আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই কারণে বণিকসভার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজের থেকেই উদ্যোগী হন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। রাজ্যে শিল্পায়নের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে মমতাও কি এমন অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেন না, প্রশ্ন শিল্পমহলের।
মমতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক শিবিরও। বাম আমলে বণিকসভার এমন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী উপস্থিত থাকতেন মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আগেই তো বলেছি লক্ষ্মীছাড়া সরকার। সবাইকে তাড়িয়ে ছাড়বে। মুখে বলবেন লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান করেছি আর কাজে করবেন হনুমান টুপি পরে (ইঙ্গিত হলদিয়া-কাণ্ড) শিল্প তাড়ানো।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন তো এই সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। কিছু গায়ক-শিল্পীকে উচ্চাসনে বসানোটাই অগ্রাধিকার। তাঁদের নিয়েই সরকার মাতোয়ারা।”
রেলমন্ত্রী হিসেবে এক বার এবং রাজ্যের ক্ষমতা পাওয়ার পরে এক বার শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা। এ ছাড়া গত বছর শিল্পপতিদের সঙ্গে বিজয়া সম্মেলন উপলক্ষে মিলিত হয়েছিলেন তিনি। এ বছরও আগামী ৯ তারিখ বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু শিল্পমহলের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগাযোগ, আলাপচারিতা সামগ্রিক ভাবে গতি হারিয়েছে বলেই অনেকের মত। সরকারের প্রতি শিল্পপতিদের আস্থা আরও কমেছে সাম্প্রতিক এবিজি-কাণ্ডে।
এই পরিস্থিতিতে ফিকি-র সভায় গিয়ে লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করার একটা সুযোগ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। যা কাজে লাগাল না রাজ্য। |