সোমবার রাতভর ধরে তল্লাশি চালিয়ে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৫ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করল বিএসএফ। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ধৃতেরা দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে চোরাপথে পারাপারের চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। বনগাঁ থানা এলাকার জয়ন্তীপুর এবং পেট্রাপোল থেকে ৩২ জনকে গ্রেফতার করে বিএসএফ। গাইঘাটা থানার জোড়াব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় আরও ২ জন বাংলাদেশি। তারা আগেই চোরাপথে এদেশে ঢুকেছিল। এ দিন বাংলাদেশে ফিরছিল। বাগদা থানার উত্তরপাড়া থেকেও বিএসএফ এক জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে মহিলাও আছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বাড়ি বাংলাদেশের যশোহর, জিয়ানগর, চৌগাছা, বেনাপোল, ফরিদপুর, কুষ্ঠিয়া প্রভৃতি এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরে বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত এলাকা বিশেষ করে জয়ন্তীপুর, পেট্রাপোল,খেদাপাড়া, কালিয়ানি, আংরাইল ঝাউডাঙ্গা, বাঁশঘাটা, গাঙ্গুলিয়া, রণঘাট প্রভৃতি এলাকা দিয়ে ‘ধুর পাচার’ (টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে যারা পারাপার করিয়ে দেয়) ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। যে চোরাপথে এই কাজ চলে তার নাম ‘বাগানপোর্ট’। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের সীমান্ত এলাকাতেই এই দালাল চক্র সক্রিয়। এ জন্য তাদের মোটা টাকাও দিতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এদেশে আসতে দালাল মাথাপিছু দিতে হয় ২০০০ টাকা। আর বাংলাদেশ যেতে মাথা পিছু ১৮০০ টাকা। চোরাপথে এদেশে ঢুকে বাংলাদেশিরা বনগাঁ শহরের নিদিষ্ট লজ এবং হোটেলে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়া থেকে বাঁচতে মহিলারা শাড়ির বদলে চুড়িদার পরে। পরে সুযোগ বুঝে বাস, অটো-রিকশা, মোটর সাইকেলে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন পাচারকারীরা।
ভারতে মূলত আত্মীয়ের বাড়িতে কিংবা গুজরাট, মুম্বইয়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজের উদ্দেশ্যে চোরাপথে এদেশে আসেন বাংলাদেশিরা। বনগাঁয় মোট ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে ২০ কিলোমিটার অংশে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। মূলত সেই সব জায়গা দিয়েই চলে বেআইনি পারাপার। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এই সব দালালদের যোগ রয়েছে। ফলে কেউ কিছু করতে পারে না।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ধুর পাচার আটকাতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। যে সব জায়গায় সীমান্তে কাঁটাতার নেই সেই সব এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে যৌথ নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে ভারতে ঢুকে পড়ার পর অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” |