সঙ্কটে অবিচলিত
টেস্ট কিন্তু আমি খেলবই বলে দিলেন দিন্দা
গালে তিন দিনের না কাটা দাড়ি। মাঝে মাঝে তাতে হাত বোলাচ্ছেন। সাদাসিধে টি-শার্ট আর ট্র্যাকস্যুট পরা চেহারাটা প্রতিবেশীর বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। চোখেমুখে একটা বিধ্বস্ত ভাব।
অশোক দিন্দা কি এখনও বিষণ্ণ? দাড়ি কাটতেও ইচ্ছে করছে না?
বেলা দু’টো। টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি কমপ্লেক্সের লনে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা কানে যেতে হেসে ফেললেন বাংলা পেসার। “আরে, না না। টানা সাত দিন খেললাম। রোজ ভোরে উঠে দৌড়তে হয়েছে। দাড়ি আর কাটব কখন?” একটু থেমে আবার বলে উঠলেন, “আজও সময় পাইনি। এতক্ষণ রান্না করছিলাম।”
অশোক দিন্দা রান্না করছেন!
“করতে হয় তো। একা থাকি। মা থাকে না। নিজেকেই সব কিছু করে নিতে হয়,” বলতে বলতে একটু চুপ। কথা বলার সময় একটু যেন খেই হারাচ্ছেন। টেস্ট দলে না থাকার ‘ট্রমা’-র পর চব্বিশ ঘণ্টাও তখন পার হয়নি। সোমবার মাঠে খবরটা শুনে আর বল করতে চাননি দিন্দা। গড়পড়তা দিনে ম্যাচ শেষে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করাটা যাঁর পছন্দ, তিনি গত কাল ইডেনের পর সোজা বাড়িতে। একটু সান্ধ্য চা, তার পর সোজা প্লে-স্টেশন। সব শেষে বিছানায়।
দল নির্বাচনের পরের সকাল। বাড়ির সামনে দিন্দা। ছবি: উৎপল সরকার
“প্লে-স্টেশন খেললে মনটা ভাল হয়ে যায়। আমি, ঋদ্ধি বরাবরই এটা করি। আর প্রাথমিক ধাক্কাটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। দেখুন, মনে মনে টেস্ট দলে থাকার প্রত্যাশাটা ভাল রকম ছিল। একটু খারাপ তো লাগবেই,” বলছিলেন আগুনে পেসার। কিন্তু তা বলে রুটিন পাল্টাননি। “আজও জিম করেছি। কাগজ দেখেছি। বিকেলে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করব। বুধবারই আবার বেরিয়ে যেতে হবে। পঞ্জাব ম্যাচ আছে।” একই সঙ্গে ছেলেবেলার কোচ অটল দেববর্মনকেও সামলাচ্ছেন। ছাত্র টেস্ট টিমে নেই শুনে ফোন করেছিলেন গুরু। দিন্দার নির্লিপ্ত গলা শুনে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এত শান্ত থাকতে পারছিস কী ভাবে?’ দিন্দা বুঝিয়েছেন তাঁকে। বলেছেন, “স্যর এটাই স্পোর্টসম্যানের জীবন। রোজ তো আমাদের নতুন করে শুরু করতে হয়। চড়াই-উতরাই তো থাকবেই।”
জীবনে ওঠা-পড়ার পাঠ যাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন তিনি, সেই অভীক চৌধুরি এখন আর ক্রিকেট খেলেন না। বছর দু’য়েক আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় এক সময়ের প্রতিশ্রুতিমান বাংলা অলরাউন্ডারের জীবন থেকে ক্রিকেট বাদ পড়েছে। কিন্তু পুরো অকেজো করে দিতে পারেনি। “বলতে পারেন, জলজ্যান্ত অনুপ্রেরণা। যখনই জীবনে ধাক্কা খাই, মনে হয় পারব না, অভীককে দেখি। মনে হয়, অভীক যদি ওই অবস্থা থেকে ফিরতে পারে, আমি সব বাধা উড়িয়ে দেশের হয়ে খেলব না কেন?” বলে আরও একটা অদ্ভুত কথা শোনালেন দিন্দা। “আমি যেখান থেকে উঠে এসেছি, সেখানে এখনও ডিউস বল পৌঁছয়নি। ওই অবস্থা থেকে আমি এত দূর এসেছি। পিছিয়ে যাব আর কী ভাবে?”
শুনলে মনে ধন্ধ লাগবে। অশোক দিন্দা কি দার্শনিক হয়ে গেলেন? ফাস্ট বোলারের সেই গরগরে জেদটা কোথায়?
“কে বলল আমি হাল ছেড়েছি?” এ বার তাঁকে চেনা লাগে। মেলানো যায় সেই দিন্দার সঙ্গে যিনি সোমবারের ইডেনে দেড়শো কিলোমিটার গতিবেগে ছিটকে দেন রাজস্থান ওপেনারের স্টাম্প। “দলীপে সাত উইকেটে হয়নি। ঠিক আছে। এ বার তা হলে ন’টা-দশটা উইকেট নিতে হবে। ৬৯ উইকেটে যখন হয়নি, তখন একশোটা নিতে হবে। সামনে পঞ্জাব ম্যাচ আছে। তার পর দেখা যাক। আমি জানি, আমি দেশের হয়ে টেস্ট খেলব। খেলবই!”
কথা শেষ করে কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকে যান দিন্দা। ব্যাগ গুছোনো বাকি, কিটব্যাগটাও দেখে নিতে হবে। বুধবার থেকে তো নতুন জীবন। নতুন স্বপ্নের চাঁদমারি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.