চা বাগানে হাতির হানায় মৃত ২ |
রাতভর বাগানে ‘বন্দি’ ৫ বনকর্মী |
মৃত্যু মিছিল আছে। ক্ষতিপূরণ নেই। বছর খানেক আগেও হাতির হানায় শস্যহানি বা গ্রামবাসীর প্রাণহানিক্ষতিপূরণের বরাদ্দ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের হাতে দিতেন বনকর্মীরা। কিন্তু বনাধিকারিকদের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার সেই ‘অধিকারে’ দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে। বন বিভাগে টাকা ‘নয়ছয়’ হচ্ছে, এমনই অভিযোগে, ক্ষতিপূরণ থেকে হাতি তাড়াতে সামান্য পটকা কেনার টাকা এখন বনাধিকারিকেরা জঙ্গল ঘেঁষা গ্রামের বাসিন্দাদের হাতে তুলে দিতে পারছেন না। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজনকে এখন তাই ছুটতে হচ্ছে জেলা সদরের ট্রেজারি। ফলে প্রাপ্য পেতে বছর ঘুরে যাচ্ছে।
গত দু’দিনে নকশালবাড়ি এলাকায় হাতির হানায় শস্যহানির পাশাপাশি ২ গ্রামবাসীর মৃত্যুর পরেও ক্ষতিপূরণের যৎসামান্যও পাননি তাঁরা। আর তারই জেরে রাতভর দুই বনকর্তা-সহ পাঁচ জনকে বন্দি করে রাখলেন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার সকালে ওই বনকর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়েও এক দফা হেনস্থা হতে হল বন দফতরের কর্তাদের। কার্শিয়াং ডিভিশনের এডিএফও নারায়ণ চন্দ্র রায় বলেন, “হাতির হানায় কয়েক দিন ধরে ফসল নষ্ট হচ্ছিল। দু-দুটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গ্রামবাসীরা তাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তারই জেরে ওই ঘটনা।”
সোমবার রাতে মিনগাড়া বস্তি এলাকায় ১৩২ হাতির একটি দল রীতিমতো চষে বেড়ায়। খবর পেয়েই এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের কর্মীরা ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। জনা কুড়ি কর্মী ওই হাতির দলটিকে জঙ্গলের দিতে ঠেলে দিয়ে ফিরছিলেন। মিনগাড়া বস্তির কাছে তাঁদের পথ আটকায় স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা স্কোয়াডের গাড়িটিকে আটকে রাখেন। গাড়িতে বাগডোগরা এলিফ্যান্ট স্কোয়াড রেঞ্জার সুরেশ নার্জারি সহ পাঁচ বনকর্মী ছিলেন। তাঁরা বাসিন্দাদের কাছে বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও ফল হয়নি। রাতভর তাঁদের আটকে রাখা হয়। রাতে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বাগডোগরার রেঞ্জার প্রকাশ প্রধান সহ আরও কয়েকজন কর্মী। গ্রামে ঢোকা মাত্র তাঁদের আটক করা হয়। বনকর্মীদের অভিযোগ, প্রায় পনেরো ঘণ্টা অভুক্ত ছিলেন তাঁরা। এই অবস্থায়, কাজ করা ‘ঝুঁকি’ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান বনকর্মীরা।
কিন্তু উত্তরভঙ্গের জল-জঙ্গলের গ্রামবাসীদের সঙ্গে বনকর্মীদের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ কি?
বন কর্মীদের একাংশ স্পষ্টই বলছেন, “দিনের পর দিন ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। জঙ্গলের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। আর তার আঁচ পোহাচ্ছি আমরা।” নিয়মানুযায়ী শস্যহানির ক্ষতিপূরণের টাকা (বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা) কিংবা প্রাণহাণির ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ লক্ষ টাকার তিরিশ শতাংশ ঘটনাস্থলেই গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা বন বিভাগের। কিন্তু সে টাকা বিশ বাঁও জলে। গ্রামবাসীদের দাবি, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা ভুলতে বসেছি আমরা।’’
এক রাতেই শিলিগুড়ি সংলগ্ন দুটি চা বাগানে হাতির হামলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন দফতর সূত্রের খবর, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কার্শিয়াংয়ের মারিয়ান চা বাগানে শঙ্কর নেহার (৪৭) নামে এক প্রৌঢ়কে পিষে মারে হাতিতে। বাগানেই তাঁর বাড়ি। মঙ্গলবার সকালে প্রধাননগর থানার মোঁহরগাও-গুলমা চা বাগানে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে হাতির হামলায় দিলবাহাদুর ছেত্রী (৫৯) নামে প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। বনকর্মীদের অনুমান, একটি মাকনা হাতিই এলাকায় খুনে হয়ে উঠেছে। তার পায়ের পিছনে ক্ষত রয়েছে বলেও দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। সে’টিকে গুলি করে এখন চিকিৎসার চেষ্টা শুরু করেছেন বনকর্মীরা। |