ভয়ে তটস্থ কালনা হাসপাতাল, ভ্রূক্ষেপ নেই লালু আর কালুর
ক জন মিশমিশে কালো। অন্য জনের রং লালচে। স্বভাব মোটামুটি শান্ত। তবে হাসপাতাল চত্বরে চলার পথে কেউ সামনে চলে এলেই বিপদ। হুঙ্কার ছেড়ে তাঁদের জখম করতেও পিছপা হয় না দু’জনেই। তাদের গুঁতোয় জখম হয়ে অনেক রোগীর আত্মীয়কে ভর্তি হতে হয়েছে ওই হাসপাতালেই।
ওরা দু’টি ষাঁড়, কালু আর লালু। কালনা মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ওদের অবাধ বিচরণ। বছরখানেক আগে থেকে হাসপাতাল চত্বরে দেখা যাচ্ছে লালুকে, কালু অবশ্য এসেছে মাস ছয়েক আগে।
কালনা শহর সংলগ্ন হাটকালনা পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে হাসপাতালটি। কালনার পাশাপাশি হুগলি ও নদিয়ার লোকজনও এই হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল। এই হাসপাতালে ঢোকার দরজা মোট তিনটি। বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় দেড় দশক ধরে সেগুলি ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই সকাল থেকেই বিনা দ্বিধায় ঢুকে পড়ে গরু-ছাগল।
বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিল লালুও। লালচে রঙের জন্য তার নাম দেওয়া হয় লালু। বছর তিনেক আগে হাসপাতাল চত্বরে একশো দিনের প্রকল্পে লেবু, পেয়ারা, আপেল-সহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেছিল হাটকালনা পঞ্চায়েত। যদিও সেগুলির অধিকাংশই গিয়েছে লালুর পেটে। তার সঙ্গে মাস ছয়েক আগে যোগ দিয়েছে কালুও। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, দু’জনকে নাকি কখনও একসঙ্গে দেখা যায় না। এক জন ঢুকলেই অন্য জন উধাও।
কালনা মহকুমা হাসপাতালে লালু ও কালু। —নিজস্ব চিত্র।
এক রোগীর আত্মীয় সাবেরী ঘোষের দাবি, “হাসপাতালে ঢোকার মুখে কাউকে দেখতে পেলেই বেজায় রেগে যায় লালু। হুঙ্কার ছেড়ে তেড়ে আসে। সপ্তাহ খানেক আগে ওর ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। কয়েক জন এসে আমাকে বাঁচায়। শুনেছি, ওর গুঁতোয় জখম হয়ে রোগী দেখতে আসা অনেকেই রোগী হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সদ্দারের কথায়, শুধু হাসপাতালেই নয়, লালু চটে গেলে রক্ষা পায় না আশপাশের বাসিন্দারাও। একবার আমার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। সে বার কোনও মতে প্রাণে বাঁচি। ওর ভয়ে এখন বাড়ির চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছি।”
আর এক ভুক্তভোগী মণিরাম বাস্কে বললেন, “লাল ষাঁড়টা পিছন থেকে আক্রমণ করে। ভাতের থালা নিয়ে অসতর্ক ভাবে বসলেই সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়।”
লালুর আক্রমণাত্মক মেজাজের কথা জানতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কিলোমিটার ছয়েক দূরের একটি রেখে আসাসর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সে ফের ফিরে আসে তার পুরনো আস্তানায়।
কালু অবশ্য একটু শান্ত। হাসপাতালের কর্মীরা জানালেন, সে নাকি বড় ধীরে চলে। মাঝেমধ্যেই রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে চলার পথ বন্ধ করে দেয়।
একটা ব্যাপারে দু’জনের বড় মিল। সাদা জিনিস দেখলে রাগ বাড়ে দু’জনেরই। ইতিমধ্যেই সাদা গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। এক পরিচিতকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন হাটকালনা গ্রামের তৃণমূল নেতা সুবল ধারা। তিনি বলেন, “ঝিরঝিরে বৃষ্টি চলছিল। মোটরবাইকটি সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ভিতরে গিয়েছিলাম। আচমকা পলিথিন ছিঁড়ে বাইকটি মাটিতে ফেলে দেয় একটি ষাঁড়।”
কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল ছুটিতে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বর্তমানে সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন কালনার মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, “শুনেছি ষাঁড় দু’টির ভয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। এ ব্যাপারে দমকলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.