‘ডোমেস্টিক’ গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে ভরা হত ‘কমার্সিয়াল’ সিলিন্ডারে। সেই সিলিন্ডার বেচে লাভ অনেক বেশি। এ ভাবেই চলত বেআইনি এবং একই সঙ্গে বিপজ্জনক ব্যবসা। সম্প্রতি এই কারবারে যুক্ত চার যুবককে গ্রেফতার করে এই তথ্য পুলিশের সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই দু’দফায় বেআইনি ভাবে মজুত ২০টিরও বেশি সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মাসখানেক আগে শ্রীরামপুরের ৪ নম্বর কলোনির একটি ক্লাবে অসাধু এই ব্যবসা চলছে বলে হদিস পায় পুলিশ। কয়েকটি ফাঁকা এবং গ্যাস-ভর্তি সিলিন্ডারও উদ্ধার হয়। একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনেই ওই কাজ চলছিল। বলা বাহুল্য, অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে চলছিল এই কারবার। সে সময়ে অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শেষমেশ রবিবার রাতে সৌরভ সেন এবং সুজয় ওরফে পলু মজুমদার নামে দুই যুবক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তাঁদের জেরা করে তদন্তকারীরা শেওড়াফুলির খোন্দকারপাড়ায় একই ধরনের কারবারের কথা জানতে পারেন। এরপরেই শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে বিশাল বাহিনী নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় খোন্দকারপাড়ায় হানা দিয়ে আরও ১৪টি গ্যাস-সিলিন্ডার উদ্ধার করেন। টোটন সাহা, বিশ্বজিৎ সাহা নামে আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ওই কারবার চালানো হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এই চক্রে আরও যারা জড়িত আছে, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
পুলিশের দাবি, ওই কারবারের মূল চাঁই স্বপন বৈষ্ণব ওরফে বিন। তিনি শেওড়াফুলিতে ভাড়া থাকতেন। পুলিশি হানার পর থেকেই তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। স্বপন আগে ডানকুনিতে একটি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থায় কাজ করতেন। সংস্থার পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজেকে গ্যাস সংস্থার লোক বলে দাবি করতেন। বিশ্বজিৎ স্নাতক। কারখানায় কাজ করতেন এক সময়ে। তদন্তকারীদের কাছে তিনি দাবি করেছেন, স্বপনই টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁকে এবং অন্যদের এই কাজে নামায়। স্বপনের খোঁজ চলছে।
কিন্তু কী ভাবে চলত এই কারবার? তাতে লাভই বা হত কী ভাবে?
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বপনের মাধ্যমে বিশ্বজিতের নামে বেশ কয়েকটি কমার্সিয়াল গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়। তাঁর নামে বের হওয়া সিলিন্ডার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। ওই সিলিন্ডারগুলি ফাঁকা হলে শুরু হয় আসল খেলা।
ফাঁকা সিলিন্ডারগুলি জোগাড় করে কারবারিরা। অন্য দিকে, গৃহস্থের বাড়িতে সরবরাহের সময় মাঝরাস্তা থেকেই বেশি দাম দিয়ে কিনে নেওয়া হয় আরও কিছু সিলিন্ডার। ওই ‘ডোমেস্টিক’ সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে নিয়ে ফাঁকা ‘কমার্শিয়াল’ সিলিন্ডারগুলিতে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দোকানে দোকানে। বলাই বাহুল্য, বাজার দরের থেকে কিছু কম দাম ধার্য্য করায় সেই সিলিন্ডার কিনেও নেন ব্যবসায়ীরা। বেআইনি ভাবে এই সিলিন্ডার কেনার জন্য টাকা জমাও (ডিপোজিট) রাখতে হয় না গ্যাস ডিলারদের কাছে।
তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ধরা যাক ৪টি গ্যাস-ভর্তি ‘ডোমেস্টিক’ সিলিন্ডারের গ্যাস বের করে ৩টি ফাঁকা ‘কমার্সিয়াল’ সিলিন্ডার ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৪টি ‘ডোমেস্টিক’ সিলিন্ডার কেনা হয় ২৮০০ টাকায়। আর তা দিয়ে তৈরি ৩টি ‘কমার্সিয়াল’ সিলিন্ডার বিক্রি হয় ৪৮০০ টাকায়। এই ভাবে যত উৎপাদন, তত লাভ। পুলিশের দাবি, মাস শেষে লাভের অঙ্কটা দাঁড়ায় লক্ষাধিক টাকায়। খুব সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে খালি সিলিন্ডারে পাঠানো হত বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই সব সরঞ্জামও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
|