আন্দ্রে বেতেই চড়া গলায় কথা বলেন না। শান্ত ভাবে নিজের অভিমত পেশ করেন, যুক্তি দেন, তার পর শ্রোতা বা পাঠককে অনেকটা পরিসর ছেড়ে দেন। নিজের মতো করে ভাববার পরিসর। কিছু দিন আগে বেরিয়েছে ‘ডিমক্র্যাসি অ্যান্ড ইটস ইনস্টিটিউশনস’ (অক্সফোর্ড)। বইটির শুরুতেই একটি কথা বলেছেন প্রবীণ সমাজতত্ত্ববিদ। বলেছেন, সব ধরনের সমাজেই বিরোধিতা থাকে, কিন্তু গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এই যে, সে বিরোধিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়, ফলে সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে একটা মূল্যবান সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার মধ্যে বিরোধিতা থাকে, দ্বন্দ্ব থাকে, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে, কিন্তু পাশাপাশি থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস। বেতেইয়ের মতে, এই বিশ্বাসের অভাব ঘটলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বড় আশঙ্কা।
কত বড়, তা প্রতি দিন মর্মে মর্মে টের পাচ্ছি। কেবল সরকার বনাম বিরোধী নয়, গোটা সমাজটার রন্ধ্রে রন্ধ্রে পারস্পরিক অবিশ্বাস আর অশ্রদ্ধা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। ‘আমরা বনাম ওরা’র বহুচর্চিত ছকেও আজ আর এই সমাজকে পুরোপুরি চেনা যাবে না। ‘আগে বলো তুমি কোন দলে’ জপ করতে করতে আমরা এমন একটা কিনারায় পৌঁছে গেলাম, যেখানে কোনও প্রশ্নকেই আর স্বচ্ছ দৃষ্টিতে বিচার করতে পারি না, কোনও ভিন্ন অভিমত বা স্বতন্ত্র অবস্থানকেই আর খোলা মনে শুনতে পারি না, সর্বত্র অভিসন্ধি খুঁজি। যাঁরা রাজনীতির কারবারি, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে এই অন্ধকারের সাধনা করে আসছেন। কিন্তু তাঁদের দোষ দিয়ে দায় সারতে পারি কই? রাজনীতি তো স্বয়ম্ভূ নয়, নিরালম্বও নয়, সমাজই তাকে ধারণ করে, লালনও।
একটা সমাজ তার সমস্ত প্রতিষ্ঠান সমভিব্যাহারে শ্মশানযাত্রী। শেষের সে দিন হয়তো সত্যিই ভয়ঙ্কর। |