সম্পাদকীয় ২...
চিত্তশক্তির পরীক্ষা
কোনও কাজের জন্য যে কেবল দক্ষতা থাকিলেই চলে না, কাজের উপযোগী মানসিকতাও লাগে, এই মহামূল্যবান উপলব্ধিটি সম্যক ভাবে লাভ করা গিয়াছে আধুনিকতা হইতে উত্তর-আধুনিকতায় উপনীত হইবার পর। উত্তর-আধুনিক বা আধুনিক-উত্তর সভ্যতায় তাই ক্রমাগতই এই মানস বা মানসিকতার দিকটিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই ইহা সত্য। কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ বা পরিকল্পনার দায়িত্ব যাঁহাদের উপর থাকে, তাঁহাদের ক্ষেত্রে ইহা কয়েক গুণ বেশি সত্য। সুতরাং দেশের অন্যতম বড় ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষা সি-ম্যাট বা কমন ম্যানেজমেন্ট এনট্রান্স টেস্ট-এর ক্ষেত্রে যে “আই কিউ”-এর সহিত জায়গা পাইল “ই কিউ” (ইমোশনাল কোশেন্ট) বা আবেগগত পরিমাপ, ইহা অত্যন্ত সুসংবাদ। যদিও ৪০০ নম্বরের মধ্যে মাত্রই ২৫ নম্বর ধার্য ইহার জন্য, আপাতত, তবে সামান্য সূচনাও শুভ সূচনা।
ম্যানেজাররা ম্যানেজ করেন, বহু মানুষকে চালিত করার ভার থাকে তাঁহাদের উপর, বাজারের উত্থান-পতনে তাঁহাদের অবিচলচিত্ত থাকিতে হয়, স্টক মার্কেট ভাঙিয়া পড়িলেও তাঁহাদের শীতলমস্তিষ্কে সংকট মোকাবিলা করিতে হয়। সুতরাং তাঁহাদের মানসিক ও আবেগগত ভারসাম্য সুস্থিত কি না, সুবিবেচনার উপযোগী কি না, তাহা প্রথমেই পরীক্ষিত হওয়া প্রয়োজন বইকী। এই সুস্থিতির অভাবে পরবর্তী কালে কেবল ব্যক্তিবিশেষ নহে, কর্মী-সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানকেও যথেষ্ট ভুগিতে হইতে পারে, সুতরাং প্রতিষ্ঠান নিজের স্বার্থেই ম্যানেজার নিয়োগের পূর্বে জানিয়া লইতে চাহিবে, কতখানি নিরাপদ হস্তে তাহার মানবসম্পদ কিংবা অন্যান্য পরিকল্পনা-নিয়ন্ত্রণের দায়দায়িত্ব তাহারা অর্পণ করিতেছে। অর্থাৎ ইহা নিছক মানবিক প্রশ্ন নহে, পুরাদস্তুর ব্যবসায়িক প্রশ্ন। তবে কি না, এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। ‘ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স’ বা আবেগগত বুদ্ধি বস্তুটি যেহেতু বিচার করা কঠিন, পরিস্থিতি-সাপেক্ষ, ব্যক্তি-সাপেক্ষ এবং সংবেদনশীল কাজ, সেই কারণে কী উপায়ে এই পরীক্ষা সাধিত হইবে, তাহা লইয়া সংশয় কিন্তু থাকিয়াই যায়। ভারতীয় পরীক্ষাব্যবস্থা যে অপার যান্ত্রিকতার দোষে দুষ্ট, কোনও ব্যক্তিসাপেক্ষতার ধার না ধারিয়া বুলডোজার-নীতিতে সব পরীক্ষার্থীকে একই মানদণ্ডে ফেলিয়া পিষিবার যে পদ্ধতি এই দেশে প্রচলিত, তদ্রূপ পদ্ধতিতে কিন্তু আবেগগত যোগ্যতার বিচার চলিবে না। তাহা চালাইবার চেষ্টা করিলে বরে শাপ হইবার সম্ভাবনা! অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন-এর এই সিদ্ধান্ত ক্রমে ম্যানেজমেন্ট অন্যান্য পরীক্ষাতেও ব্যবহৃত হইবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কিন্তু কেবল তাহাই যথেষ্ট নয়। যে কোনও বৃহৎ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ইহা কাম্য। শিক্ষক, প্রশাসক, পুলিশ এমনকী বাসচালক এই সকল বৃত্তিতেই বা কেন আবেগ-যোগ্যতার পরিমাপ আবশ্যক হইবে না? অন্য বাসের সহিত রেষারেষির ‘মজা’য় যে সমাজে কোনও বাসচালক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটাইতেও পিছপা হন না, সেই সমাজে এ হেন যোগ্যতার পরীক্ষা কেবল বাঞ্ছনীয় নয়, অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.