|
|
|
|
মাঝ আকাশে বেগ, ডাঙার খোঁজে নাকাল চালক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাটি থেকে তখন আট হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ছোট্ট দু’আসনের বিমানটি। আচমকা পাইলটের পেটে ভয়ানক মোচড়। ছোট্ট বিমান। তাই শৌচালয়ও নেই। ঘাবড়ে গেলেন মুখ্য বৈমানিক পেরদু ওরসাব। ফ্যাকাশে মুখ। বেগ আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। পাশে বসে তাঁর সহকারী। তাঁর নাম পেরদু মার্ক ফটিরল্ট। বেগতিক বুঝে সহকারী পেরদু জরুরি বার্তা পাঠালেন কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে। কিন্তু, বিমান ততক্ষণে কলকাতা থেকে বহুদূর। বারাণসী ছাড়িয়ে লখনউয়ের পথে।
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোট্ট একটি দ্বীপ নিউ ক্যালিডনিয়া। দুই পেরদু সেখানকারই বাসিন্দা। ছোট্ট ডব্লিউটি ৯ বিমান নিয়ে তাঁরা বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন। সেই বিশ্বদর্শনের তালিকায় স্থান পেয়েছিল কলকাতাও। সোমবার তাঁরা দু’জন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে প্রথমে পটনা নামেন। তার পর সেখান থেকে কলকাতা। নির্দিষ্ট সূচি মেনে মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৪ মিনিটে কলকাতা ছেড়ে উড়ে যান দিল্লির পথে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ছোট্ট বিমান। তাই মাটি থেকে আট হাজার ফুট উঁচুতে ২০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে যাচ্ছিল দিল্লির দিকে। কিন্তু মাঝ পথে এই বিপত্তি! |
|
সহকারী পেরদু কলকাতা এটিসি-কে জানান, তাঁর সঙ্গীর যা অবস্থা তাতে অবিলম্বে নামতে হবে কোনও বিমানবন্দরে। শৌচালয়ের বড় প্রয়োজন। তখন প্রায় বিকেল সাড়ে চারটে। কলকাতা থেকে তাঁকে জানানো হয়, এখন কলকাতা ফিরতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। সেই সময়ে আকাশের যেখানে তাঁরা ছিলেন, তার সব চেয়ে কাছে কানপুরের চাকেরি বিমানবন্দর। কিন্তু, সেই বিমানবন্দর বায়ুসেনার অধীনে। পেরদু সেখানে যোগাযোগ করে নামার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু, বায়ুসেনার ঘাঁটিতে কী করে নামতে দেওয়া যায় বিদেশি বিমানকে! তা যতই পাইলটের পেটে মোচড় দিক না কেন! জানা যায়, চকেরিতে নামতে গেলে লাগবে বিদেশ মন্ত্রকের বিশেষ অনুমতি। তখন ওই অবস্থায় আকাশ থেকে কী করে অনুমতি যোগাড় করবেন নিউ ক্যালিডোনিয়ার দুই বিমানচালক?
কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তারা বেগতিক দেখে তাঁদের যোগাযোগ করতে বলেন লখনউ বিমানবন্দরে। লখনউ এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে মুখ্য পাইলটের অবস্থার কথা বিবরণ করেন সহকারী পেরদু। মাঝ আকাশে বিমানে যখন কোনও যাত্রীর শরীর খারাপ হয় তখন ওই যাত্রীর চিকিৎসার জন্য ‘মেডিক্যাল ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করে বিমানটিকে তড়িঘড়ি নামিয়ে আনা হয়। এ দিনও সেই ‘মেডিক্যাল ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করে লখনউ বিমানবন্দরে নামিয়ে আনা হয় দু’আসনের বিমানটিকে। পাইলট দৌড়োন বিমানবন্দরের শৌচালয়ের দিকে।
সোমবার রাতে কলকাতায় এসে মঙ্গলবার দুপুরে বিমান নিয়ে ওড়ার আগে মুখ্য বৈমানিক শহরের মুখরোচক খাবার চেখে দেখেছিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিমানবন্দরের কর্তা-ব্যক্তিরা। |
|
|
|
|
|