সঙ্ঘের চাপে দল আপাতত গডকড়ীতেই
প্রকাশ্য বিদ্রোহ, দলের শীর্ষ নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও সঙ্ঘের চাপে আপাতত গদিতে টিকে রইলেন নিতিন গডকড়ী। দল ‘কলুষমুক্ত’ ঘোষণা করায় দ্বিতীয় দফায় তাঁর সভাপতি হওয়ার রাস্তাও এতে মসৃণ হল বলেই মনে করছে গডকড়ী-শিবির। যদিও বিজেপি-র বিদ্রোহীরা বলছেন, খেলা এখনও বাকি। প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মুখ খোলা মানা। দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী তাই মুখে কিছু বলেননি। তবে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেও গডকড়ীর বিরুদ্ধে দল বা সঙ্ঘ কোনও ব্যবস্থা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝে অসন্তুষ্ট আডবাণী এ দিন দলের বৈঠকেই যাননি। গডকড়ীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল তাঁর। হয়নি সে বৈঠকও।
আলোচনাটা যে-হেতু তাঁকে নিয়েই, গডকড়ীও তাই আজ কোর কমিটির বৈঠকে যাননি। সঙ্ঘই তাঁর হয়ে ব্যাট করেছে। সঙ্ঘের তরফে এস গুরুমূর্তি আজ দিনভর দফায় দফায় বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সঙ্কট সামলানোর চেষ্টা চালান। দেখা করেন আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির সঙ্গে। দিনের শেষে দলের কোর কমিটির বৈঠকের পর বিজেপি-র তরফে সুষমা ও জেটলির যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যাতে বলা হয়েছে, বিজেপি সভাপতি আইনি ও নৈতিক ভাবে পরিষ্কার। দল তাঁরই পাশে। যৌথ বিবৃতিতে দলের সভাপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতেও নিষেধ করা হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। এর পিছনেও সঙ্ঘেরই হাত দেখছেন বিদ্রোহীরা।
এটা ঘটনা সঙ্ঘ চাইছিল গডকড়ীকে দলের মাথায় বসিয়ে বিজেপি-র উপরে যে কর্তৃত্ব কায়েম করা গিয়েছে তা যেন আবার হাতছাড়া না হয়ে যায়। সে কারণে গডকড়ী সম্পর্কে দলের মতোই সঙ্ঘের অন্দরে প্রশ্ন থাকলেও, তাঁকে সরানোর ঝুঁকি নিতে চায়নি আরএসএস। প্রয়োজন ছিল দলকে সেটা মানানো। দিনভর আজ সেটাই করলেন গুরুমূর্তি। কার্যত চাপ দিয়েই গডকড়ীর প্রতি সমর্থন আদায় করে নিল সঙ্ঘ। দলের সদর দফতরে হাজার সমর্থক জুটিয়ে এনে, গডকড়ীর নামে স্লোগান তুলে, পটকা ফাটিয়ে তৈরি করা হল ঐক্যের বাতাবরণ। কাজ সমাধা হতে সঙ্ঘের নেতারা এখন বলছেন, কংগ্রেস যদি দুর্নীতির শতেক অভিযোগ অগ্রাহ্য করে চলে এত বছর দেশ শাসন করতে পারে, বিজেপি-ই বা কেন খামোখা সংবাদমাধ্যমের প্রচারে আমল দিতে যাবে। যদিও এর আগে বঙ্গারু লক্ষ্মণ থেকে ইয়েদুরাপ্পাকে পদ ছাড়তে হয়েছে সরকারির তদন্তের ভিত্তিতে চার্জশিট পেশের পর। গডকড়ীর ক্ষেত্রেও সরকারি তদন্তের ভিত্তিতে চার্জশিট পেশ হলে যে সেঙ্ঘের ওই যুক্তি টিকবে না, সে প্রশ্নও উঠছে বিজেপিতে। দলের শীর্ষ নেতারা অনেকেই যে গডকড়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াকে সমর্থন করছেন না, তা তাঁদের আচরণে বেশ স্পষ্ট। সঙ্ঘের প্রতিনিধি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গুরুমূর্তি আজ দুপুরে ঘণ্টা দুই ধরে আডবাণীকে বোঝান, গডকড়ী নির্দোষ। তবু কোর কমিটি ও গডকড়ীর সঙ্গে বৈঠকে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। সুষমা আজ সকালে টুইটে গডকড়ীকে সমর্থনের কথা জানালেও রাতে বৈঠকের পর তিনি বা জেটলি, দু’জনের কেউই সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। নিজে গডকড়ীর সংস্থার কর্ণধারদের কাগজপত্র ঘেঁটে সঙ্ঘকে আইনি পরামর্শ দিয়েছেন জেটলি। যৌথ বিবৃতিতে সই করলেও গডকড়ীর সমর্থনে প্রকাশ্যে কিন্তু তিনিও মুখ খোলেননি। মৌন নরেন্দ্র মোদীও।
গত কালই গডকড়ীর অপসারণের দাবিতে সরব হয়ে কর্মসমিতি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মহেশ জেঠমলানী। আজ প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তাঁর বাবা রাম জেঠমলানীও। তিনি জানান, গত কাল রাতে যশোবন্ত সিংহ, যশবন্ত সিন্হা, শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো নেতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর গডকড়ী সভাপতি পদ থেকে না সরলে তাঁরাও দল ছাড়বেন।
আবার দিল্লির নেতাদের চাপে সঙ্ঘ যদি গডকড়ীর বদলে অন্য কাউকে বসাতে যেত সে ক্ষেত্রেও আপত্তি উঠত বিজেপি-তে। তাতে সঙ্ঘের কর্তৃত্বই লঘু হয়ে পড়ত বলে মনে করেন মোহন ভাগবত। বিজেপি সূত্রের মতে, গডকড়ীর উত্তরসূরি বাছাইও সঙ্ঘের কাছে বড় সঙ্কট।
এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার শর্ত হিসেবে অনেকে ভাবছেন, গডকড়ীকে আপাতত তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে দেওয়া হোক। তার মধ্যে বিকল্প নাম ভাবা হোক। এতে গডকড়ীর বিদায়ও সম্মানজনক হবে। দলের বিদ্রোহীরা জানাচ্ছেন, সংসদের শীত অধিবেশনের আগে ফের গডকড়ী হঠানোর দাবি জোরালো ভাবে উঠবে। তাই চাপেই রইলেন গডকড়ী। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে আপাতত ঘর গোছানোয় মন দিতে হবে তাঁকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.