বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এক বিধবাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাঁরই প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে রামপুরহাট থানার কামাক্ষা গ্রামের ঘটনা। বেলি বাউড়ি (৪৭) নামে ওই মহিলাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও মঙ্গলবার দুপুরেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিনই তাঁর ভাই রামপুরহাট থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন। যদিও অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিদেবীর স্বামী মানিক বাউড়ি দশ বছর আগে মারা গিয়েছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর বাড়িতে একাই থাকতেন। প্রতিবেশী এক আত্মীয় সমর বাউড়ির সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে সন্দেহ ছিল সমরের পরিবারের। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেলিদেবীর সঙ্গে ওই পরিবারের ঝগড়াও লাগত। মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানা এলাকার বাসিন্দা নিহতের ভাই অশোক বেহেরা-র দাবি, “মঙ্গলবার সকালেই কামাক্ষা গ্রাম থেকে একজন ফোন করে আমাকে ঘটনার কথা জানান। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেখি দিদির অবস্থা খুব খারাপ। খুব কষ্ট করে জানাল, গ্রামেরই প্রতিবেশী সমর বাউড়ি, তার স্ত্রী ফুলি বাউড়ি, মা তুলসী বাউড়িই তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই দিদিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অভিযোগ হলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
রাতেই ভর্তি হলেও হাসপাতাল থেকে এ দিন সকালে ঘটনার খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরে হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ঘিরে গত শনিবার রাতে দু’পক্ষেই তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। তখন সমর বাউড়ির পরিবার বেলিদেবীকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার দিন (সোমবার) রাত ৯টা নাগাদ খাবার খেয়ে বিছানায় শোওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন বেলিদেবী। ওই সময়ই সমর, ফুলি ও তুলসী তিনজন মিলে বেলিদেবীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বেলিদেবীর চিৎকারে এবং আগুন দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীদেরই একাংশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
এ দিকে কামাক্ষারই বাসিন্দা বেলিদেবীর এক কাকাশ্বশুর কান্তি বাউড়ি বলেন, “বহু কাল আগে সমরের সঙ্গে বেলির একটা সম্পর্ক ছিল। সমরের বিয়ের পর ওই সম্পর্কে ছেদও পড়ে। কিন্তু পরে সমরের পরিবারে সমর-বেলির সম্পর্ক নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। সোমবার সকালে তা-ই চরম রূপ নেয়। তখন বেলি ও সমরের স্ত্রী ফুলি উভয়েই উভয়কে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়।” তাঁর দাবি, “তারই জেরে বেলি নিজেই নিজের গায়ে আগুন লাগায়।” যদিও বেলিদেবীর আরেক আত্মীয় শিবারানি বেহেরা-র পাল্টা অভিযোগ, “সমরের সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই ওরা আমাদের মেয়েকে নির্মম ভাবে খুন করল।” |