জমির প্রশ্নে কৃষকদের প্রতিরোধে গুলি চালনার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে তাঁর ক্ষমতায় উত্থান। নন্দীগ্রাম সেই ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু ক্ষমতায় এসে প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কৃষকদের প্রতিরোধে গুলি চালানোর পথেই হাঁটছেন, দুবরাজপুরের ঘটনাকে সামনে রেখে এই অস্ত্রেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে গেল বিরোধীরা।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন প্রায় প্রতিটি গুলি চালনার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন মমতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বামফ্রন্ট সরকার সেই দাবি উড়িয়ে দিত। বিরোধী ভূমিকায় এ বার কংগ্রেস মমতার পথই অনুসরণ করে দুবরাজপুরের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে।
প্রত্যাশিত ভাবেই সিবিআইয়ের কথা বলেনি প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। তবে তারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আহতদের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার খরচ দাবি করেছে। সেই সঙ্গেই প্রাদেশিক কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নৃপেন চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষক ও গ্রামবাসীদের স্বার্থরক্ষাকে সুনিশ্চিত করতে হবে।’
দুবরাজপুরে পুলিশ গুলি চালিয়েছে কি না, তা নিয়ে গ্রামবাসী এবং রাজ্য সরকারের বক্তব্যে রহস্য তৈরি হয়েছে বলে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ। ঘটনার সত্যতা জানতে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে প্রদীপবাবু মঙ্গলবার বলেন, “দুবরাজপুরে পুলিশ গুলি না-চালালে এত জন গ্রামবাসী গুলিতে আহত হলেন কী ভাবে? পুলিশ কেন ওখানে গিয়েছিল? গোটা ব্যাপারটা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে! রহস্য মেটাতে সিবিআই তদন্ত হোক।” সিআইডি তদন্তে যে কংগ্রেসের আস্থা নেই, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রদীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “সিআইডি তদন্ত করলে তো এখনই বলে দেবে, পুলিশ গুলি চালায়নি! যেটা এখন পুলিশ দাবি করছে।”
দলীয় নীতি মেনেই সিপিএম অবশ্য ঘটনার তদন্ত দাবি করেনি। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকারের বহন করার দাবি জানানোর পাশাপাশি গুলি চালনার প্রতিবাদে আজ, বুধবার জেলার সর্বত্র প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “আমরা যা খবর পেয়েছি, ওখানে গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। তবু পুলিশ গুলি চালাল কেন, তার তদন্ত হওয়া দরকার।”
রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবের মন্তব্য, “মা-মাটি-মানুষের সরকারের হাতেই এখন কৃষক আক্রান্ত! স্বভাবজাত মিথ্যাভাষণে (প্যাথলজিক্যাল লায়ার) অভ্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী যেমন খুশি বলছেন! আগামী সাড়ে তিন বছর রাজ্যটা কোন পথে চলবে, মানুষ তা জানতে চাইছে!” বড় দলগুলির পাশাপাশি সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ দুবরাজপুরে মমতার সরকারের কাণ্ডকে ‘সিঙ্গুর-২’ বলে চিহ্নিত করে জানিয়েছেন, কাল, বৃহস্পতিবার এর প্রতিবাদে ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বিবৃতিতে গ্রামবাসীদের অভিযোগের সূত্র ধরে বলা হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও আশপাশের তৃণমূল-আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতীও ছিল। সিপিএমের অভিযোগ, পুলিশ প্রথম থেকেই মারমুখী ছিল। তারা প্রথমে লাঠি ও পরে গুলি চালায়। |