সংখ্যালঘু থেকে আদিবাসী, লোবার প্রতিবাদে সকলেই
শুরু হয়েছিল বিক্ষিপ্ত ভাবেই। কিছু লোক মিলে ২০০৭ সালের শেষের দিকে গড়ে তুলেছিলেন কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। আন্দোলন বলতে সেই অর্থে কিছু ছিল না। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মাপে তো নয়ই!
মঙ্গলবার ভোরে সেই লোবাতেই ডিভিসি-এমটার মাটি কাটার যন্ত্র আনতে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পড়ার ঘটনাটা কিন্তু জানান দিচ্ছে, চার বছর আগের সেই বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ আজ চেহারা নিয়েছে পুরোদস্তুর আন্দোলনের। যে আন্দোলন সে ভাবে দেখতে গেলে বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে হচ্ছে না। আন্দোলনের রাশ চলে এসেছে জয়দীপ মজুমদার, ফেলারাম মণ্ডলের মতো কিছু অরাজনৈতিক যুবকের হাতে। রয়েছেন আদিবাসীরাও। মাঝে কলকাতা থেকে পিডিএস এবং পিডিসিআইয়ের মতো রাজনৈতিক দল লোবার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবু কৃষিজীবীদের আন্দোলন রাজনৈতিক চরিত্র পায়নি।
আন্দোলনে সামিল সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস নির্বিশেষে সব দলেরই কর্মী-সমর্থকেরা। গ্রামের শিশু-বৃদ্ধ থেকে মহিলা, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের পাশাপাশি বাকিরাওই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই রয়েছেন ডিভিসি-এমটার জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনে।
সংগঠিত সেই জোরেই ১১ মাস ধরে ডিভিসি-এমটা কোল মাইনস লিমিটেডের মাটির কাটার যন্ত্র আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছেন গ্রামবাসী। কিন্তু, কীসের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন?
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ডিভিসি-এমটার সরাসরি জমি কেনার পদ্ধতিকে ঘিরে স্থানীয় মানুষ ও কৃষিজীবীদের একটা বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছিল। লোবা অঞ্চলে হিংলো নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে মাটি ফেলে রাস্তা বানানোর অভিযোগও ওঠে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। তার জেরেও ক্ষোভ ছিল এলাকায়। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, সংস্থার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একলপ্তে এলাকার সব জমি কেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা দু’-চারটি মৌজায় বিক্ষিপ্ত ভাবে জমি কিনে কয়লাখনির জন্য খননকাজ শুরু করে দেয়। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ কৃষিজীবী, দিনমজুর, খেতমজুর, বর্গাদার বা পাট্টাদার-সহ এলাকার অধিকাংশ মানুষকে অন্ধকারে রেখে কিছু দালাল মারফত জমি কেনা চলছিল। তাঁদের দাবি, ডিভিসি-এমটাকে সরাসরি গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জমির দাম, পুনর্বাসন-সহ বিশদে প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।
জয়দীপবাবু, ফেলারামবাবুদের কথায়, “প্রথমে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছিলেন না ডিভিসি-এমটা ঠিক কী করছে। আমরা ওদের বোঝাতে সমর্থ হই, একবার কৃষিজমি চলে গেলে, পেশা হারালে তাঁরা কোথায় যাবেন। ডিভিসি-এমটা যে জমির ন্যায্য দাম, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা না করে দালাল মারফত জমি কিনে নিচ্ছে, সেটাও বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এর পরেই লোবা-সহ প্রায় ১০টি মৌজার মানুষের সমর্থন পেয়েছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি।” বড়াড়ির মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, পলাশডাঙার স্বপন মণ্ডল, লোবার ধীরেন ঘোষ, ফকিরবেড়া গ্রামের শেখ নাসিমদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। তাঁরা বলেন, “আমরা শিল্পবিরোধী নই। এলাকার উন্নয়নে শিল্প হোক, এখানকার অধিকাংশ মানুষ সেটাই চান। কিন্তু, যে পদ্ধতিতে জমি কিনে রাতারাতি মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে গিয়েছিল, তাতে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ ছিল। গ্রামের সবাই সেটা উপলব্ধি করে আজ এককাট্টা হয়েছেন। পুনর্বাসন ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়া আমরা কৃষিজমি দেব না।” এই অঞ্চলে আদিবাসীরাও যথেষ্ট সংখ্যায় রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এ দিনের প্রতিরোধে সামিল ছিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.