কার্তিকের মাঝামাঝি দিন তিনেকের অকাল বর্ষণ মর্শিদাবাদ জেলায় চাষের উপর মিশ্র প্রভাব ফেলেছে। কৃষকদের বক্তব্য এখন বেশিরভাগ জমির ধানই কাটার উপযুক্ত হয়েছে। এই বৃষ্টি পাকা ধানের ক্ষতি করল। আবার গম, ভুট্টা ও সর্ষে চাষে বৃষ্টিটা বেশ ভালোই কাজে লেগেছে। জঙ্গিপুরের কৃষি অধিকর্তা সুবীর সিংহ বলেন, “ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টিতে মাঠে পড়া থাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তবে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ উঠবে স্বর্না ধান। জেলার এ বার স্বর্না ধানের চাষই বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির ফলে উপকারই হবে। এছাড়াও ভুট্টা, গম ও সর্ষে চাষে সেচ লাগত। বৃষ্টিতে সেচের খরচ বেঁচে গেল।”
সব্জি চাষেও পড়েছে বৃষ্টির প্রভাব। বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় টম্যাটো ও কপিতে বেড়েছে ছত্রাকের আক্রমন। উদ্যান পালন দফতরের উপ-অধিকর্তা শুভদীপ নাথ বলেন, “যে সমস্ত বাধাকপি ও ফুলকপিতে ফুল ধরেছিল, বৃষ্টির ফলে সেগুলি কালচে হয়ে যাবে। যে সমস্ত জমিতে সব্জি চারা অবস্থায় রয়েছে সেখান থেকে দ্রুত জল বার না করে দিলে চারায় ছত্রাকের আক্রমন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি থামলেই জমিতে কোনও ছত্রাক নাশক সার প্রয়োগ করতে হবে।” তিনি বলেন, “নওদা-সহ জেলার কয়েকটি অঞ্চলে মহলয়ার দিন থেকেই কপি উঠতে শুরু করেছে। সেই সব কপিতে এই বৃষ্টি ক্ষতের সৃষ্টি করবে।”
বৃষ্টির দরুন আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার মধ্যে কান্দি থানার বড়ঞা ব্লকে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর এখনও পর্যন্ত ওই ব্লকে ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু বোনার কাজ হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টিতে আলুর বীজ পচে যাবে। এছাড়াও ২০০০ হেক্টর জমি আলু চাষের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির জন্য ওই সব জমিতে আলু বোনার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাবে। বড়ঞা ব্লক কৃষি আধিকারিক রবিশঙ্কর দাস বলেন, “যে সমস্ত জমিতে আলুর বীজ রোপন করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে জল জমে বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বীজ নষ্ট হয়ে গেলে সেই জমিতে পুনরায় চাষ করা যাবে। তার জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহার দরকার পড়বে না।”
জরুরের নাজিমূল শেখ বলেন, “পর্যাপ্ত মজুর না মেলায় মাঝপথে থমকে রয়েছে ধান কাটার কাজ। মাঠে পড়ে থাকা পাকা ধান অনেকটাই ঝরে গেছে।”
অন্যদিকে বৃষ্টিতে সব্জি পচে যাওয়ার আশঙ্কায় চাষিরা তড়িঘড়ি করে সব্জি বিক্রি করছেন। যোগান প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় সব্জির এখন বিকোচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে। তবে বৃষ্টির পর এই যোগান কমলে তখন অনেকটাই দাম চড়বে। |