১) যুবরাজ সিংহকে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরানো হল, এটা কি ঠিক সিদ্ধান্ত?
২) যুবরাজ-কাহিনি কি ক্যানসার চিকিৎসায় অলৌকিক কোনও ঘটনা?
৩) খেলতে গিয়ে কী কী ব্যাপারে ওকে সতর্ক থাকতে হবে?
৪) টিমমেটদের কাছ থেকে ওর কী ধরনের সহযোগিতা দরকার?
৫) আপনারাও কি আগ্রহ নিয়ে এই টেস্টটা দেখবেন?
৬) যুবরাজ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মনটাই আসল’। যুবরাজের
কাহিনি কি ক্যানসার চিকিৎসার ব্যাকরণটাই বদলে দিল? |
সৈকত গুপ্ত (ক্যানসার শল্যচিকিৎসক) |
• ও যদি শারীরিক ভাবে নিজেকে সুস্থ মনে করে, তবে অসুবিধে নেই।
• না, একেবারেই অলৌকিক নয়। জার্ম-সেল ক্যানসারের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে থাকে। এতে কেমোথেরাপিই যথেষ্ট। কারও কারও ক্ষেত্রে দরকার হতে পারে রেডিয়েশন-এরও। যুবরাজের ধরা পড়েছিল একেবারে প্রথম স্টেজে। ওর ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিই কাজ দিয়েছে।
• এমনিতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তবে ক্লান্তি অনুভব করলে ওর সেই মুর্হূতেই মাঠ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
• ও নিজে হয়তো ক্লান্তি অনুভব করছে। অথচ খেলার স্বার্থে বলছে না। সে ক্ষেত্রে টিমমেটদেরই ওকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি কখনও ওকে ক্লান্ত মনে হয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।
• এমনিতে খেলা দেখার সময়ই হয় না। দেখিও না। তবে যুবরাজের এই কামব্যাকটা অবশ্যই দেখার চেষ্টা করব।
• ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনের জোর অবশ্যই রোগীকে লড়াই করতে সাহায্য করে। তবে মনটাই সব নয়। ঠিকঠাক চিকিৎসাটা জরুরি। রোগীরা যুবরাজকে দেখে ভরসা পাবেন অবশ্যই। কিন্তু ব্যাকরণ বদলাবে না। দু’শো রকমের ক্যানসার আছে। কোনওটা ভাল, কোনওটা খারাপ। যুবরাজের যেটা হয়েছিল, সেটি নিরাময়যোগ্য। সেরে যাওয়ারই কথা। |
গৌতম মুখোপাধ্যায় (ক্যানসার শল্যচিকিৎসক) |
• আমি আগে বলেছিলাম, যে ওর ফিরে আসাটা একটু তাড়াতাড়িই হল। একটা প্রিম্যাচিওরড সিদ্ধান্ত। মনে হয়েছিল, খানিকটা আবেগতাড়িত হয়ে ওকে টিমে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ক’মাসে ওর পারফরম্যান্স বলছে একদম ঠিক সিদ্ধান্ত। ও যথেষ্ট ফিট। ওর এখনই খেলা দরকার। কারণ এই ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা বরাবরই থেকে যায়। ছ’মাস বা এক বছর পর ও ঠিক কেমন থাকবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তাই ও যখন ফিট মনে করছে নিজেকে, এটাই ওর খেলার উপযুক্ত সময়।
• একেবারেই নয়। যুবরাজের যে ধরনের ক্যানসার হয়েছিল তা কেমোথেরাপি দিয়েই সুস্থ হয়ে যায়। নিরাময়ের সম্ভাবনা ৭০-৮০%। ওর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এ বার নিয়মিত ফলোআপ-এ থাকতে হবে।
• গত চার-পাঁচটা খেলায় দেখলাম ও ভালই পারফর্ম করল। ওর না খেলার কোনও কারণ দেখি না। তবে যিনি ওর চিকিৎসক (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ), তাঁর সঙ্গে যোগাযোগটা নিয়মিত রেখে যেতে হবে।
• যেটা খুব জরুরি, তা হল ওকে এক জন স্বাভাবিক ক্রিকেটার হিসেবে দেখা। সহানুভূতির ঝড় যেন না বয়ে যায়। অসুখ নিয়ে বেশি প্রশ্ন বা বাহবা কোনওটাই ওর জন্য কাম্য নয়।
• এক টানা টেস্ট দেখার সময় তো হবে না। বাড়ি ফিরে হাইলাইটসটা অন্তত দেখার চেষ্টা করব। একটা অতিরিক্ত আগ্রহ তো থাকবেই।
• না, ব্যাকরণ বদলে দিল না। তবে যুবরাজ অন্য ক্যানসার রোগীদের কাছে আইকন হিসেবে থাকবে। ওর মনের জোর অন্যদেরও ভরসা জোগাবে। |
চঞ্চল গোস্বামী (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ) |
• যুবরাজ ফিজিক্যাল ফিটনেস পাশ করে এসেছে। এই মুহূর্তে ওর যা পারফরম্যান্স, তাতে ওকে বসিয়ে রাখা মুশকিল হত। ওয়ান-ডে ইতিমধ্যেই খেলেছে। টেস্ট ম্যাচ টানা পাঁচ দিন হলেও তার কিছু সুবিধে আছে। যখন ড্রেসিংরুমে থাকবে, তখন ধকল পড়বে না। এর আগে অনেকেই ক্যানসার থেকে ফিরে এসে সাইক্লিং-এর মতো নানা ধরনের শারীরিক কসরতের খেলা করেছেন। সুতরাং যুবরাজের ক্ষেত্রেও পারাটা অসম্ভব নয়। তবে এতে ওর কতখানি শারীরিক ক্ষতি হতে পারে বা আদৌ হবে কি না, তা সময়ই বলবে।
• একদমই না। যুবরাজের যে জার্ম-সেল ক্যানসার হয়েছিল, সেটা নিরাময়যোগ্য ক্যানসারের অন্যতম মডেল। ৯০% ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয়ে যান। ও যদি সেরে না উঠত, তবেই আমরা বরং আশ্চর্য হতাম।
• পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফিজিক্যাল ফিটনেসের সঙ্গে হেলদি ডায়েট খুব জরুরি। ট্রাভেলিংয়ের জন্যও অনেক সময় ধকল হয়। শরীর যখন দেবে না, সরে দাঁড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন ধরণের ক্রিকেট ও খেলবে, সেটা ওর ট্রেনার, চিকিৎসক এবং যুবরাজকেই মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
• আমার মনে হয় না টিমমেটদের কাছ থেকে ওর কোনও রকম সাহায্য দরকার। কারও ভরসায় থাকলে তো ও আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলতে মাঠেই নামতে পারত না। মানসিক ভাবেও ওর কোনও সাহায্য দরকার বলে আমি মনে করি না। ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে যে ভাবে ও ফিরে এল, তাতে পরিষ্কার মানসিক শক্তি ওর নিজেরই যথেষ্ট রয়েছে।
• না, টেস্ট খেলা দেখার কোনও সময় নেই। সব হাইলাইটস।
• কোনও ব্যাকরণ বদলাচ্ছে না। এ রকম নজির আগেও বহু আছে। যাঁরা ক্যানসার জয় করে আবার ফিরে এসেছিলেন। |