ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো টেস্টের দল নির্বাচনের নমুনা দেখে একটা প্রশ্ন না তুলে পারছি না। বোর্ড কি তা হলে বছরে ষাট লাখ টাকা দিয়ে নির্বাচকদের কিনে নিল? এ তো ধোনির নিজের পছন্দ করা দল। ধোনি যে রকম চাইছে, ঠিক সেই দলই ওর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই দল নির্বাচনে ক্রিকেটীয় যুক্তি দেখতে পাচ্ছি না।
প্রথমেই আসি মনোজ-দিন্দার কথায়। ওদের টেস্ট দলে না রাখাটা প্রচণ্ড অন্যায় বললেও কম বলা হয়। টেস্ট ক্যাপ পেতে গেলে ওদের আর কী করতে হবে? বুঝতে পারছি না কোন যুক্তিতে ওদের পনেরো জনের বাইরে রাখা হল। আমিও এক সময় জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ওই মিটিংয়ে কোনও ক্রিকেটারের হয়ে কেউ গলা ফাটানোর না থাকলে তার পরিসংখ্যান কোনও কাজে লাগে না। কে কত রান করেছে, ক’টা উইকেট নিয়েছে সব লোক দেখানো। আসল কথা হচ্ছে, তোমার হয়ে বলার কেউ আছে কি না। |
অভিষেকে সাবা করিম। মুম্বইয়ের নির্বাচনী বৈঠক। ছবি: পিটিআই |
মনোজ-দিন্দার জায়গায় আজ যদি আমি থাকতাম, একটা প্রশ্নই নিজেকে করতাম। “আমাকে আর কী করতে হবে?” ভেবে দেখুন তো, সেঞ্চুরি করেও পরপর চোদ্দোটা ম্যাচে বাইরে বসে থাকতে হল মনোজকে। দিন্দার ভাগ্যটাও ভাল কোথায়? গত মরসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেট, এ বারও দলীপে পূর্বাঞ্চলকে ফাইনালে তোলাএত কিছুর পরে ওর কপালে জুটল কয়েকটা টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে! বাংলার এই দুটো ছেলেকে কি নির্বাচকেরা অন্য কোনও মাপকাঠি দিয়ে মাপেন? না হলে ওদের মতো ছন্দে থাকা দুই ক্রিকেটারের আগে কেন সুযোগ পাবে ফর্মে না থাকা মুরলী বিজয় বা ইশান্ত শর্মা? উত্তরপ্রদেশের সবুজ পিচে অনামী বোলাররাও উইকেট পাচ্ছে, কিন্তু ইশান্ত ডোবাচ্ছে। ওর ম্যাচ ফিটনেস কেউ পরীক্ষা করেনি। তা-ও দিন্দার আগে ওকে দলে রাখা হচ্ছে! আর এক টিমের চার ওপেনার শেষ কবে দেখেছি, মনে করতে পারছি না। যেখানে সহবাগ-গম্ভীর আছে, সেখানে মুরলী বিজয় কী করছে? শুনছি রাহানেকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে। সন্দীপ পাতিল যা-ই বলুক, রাহানে ওপেনারই। একগাদা ওপেনার না রেখে কি মিডল অর্ডারের ব্যাক-আপ হিসেবে মনোজকে সুযোগ দেওয়া যেত না?
অনেকে বলবেন, সুরেশ রায়নাও তো নেই। ধোনির পছন্দের লিস্টে থেকেও। আমি এতে অবাক হইনি। ও তো টেস্ট প্লেয়ারই নয়। শর্ট বলের মোকাবিলা করতে ও কী রকম নাকানিচোবানি খায় সেটা সবাই জানে। সবচেয়ে বড় কথা হল, সেই ভুল শুধরোনোর কোনও রকম চেষ্টাই করেনি রায়না। ওয়ান ডে দলে নিয়মিত সুযোগ পেয়ে হয়তো ভেবেছে টেকনিক শুধরোনোর দরকার নেই। টি-টোয়েন্টিতে ও যতই রান করে থাক, ওই দিয়ে কিছুর বিচার করা যায় না। টেস্ট ম্যাচে হুক করতে গেলে দেখবে পিছনে দু’জন ফিল্ডার দাঁড়িয়ে আছে ক্যাচ লোফার জন্য।
যুবরাজ সিংহের টেস্ট প্রত্যাবর্তন অবশ্যই ঐতিহাসিক ব্যাপার। আর যে সিরিজের জন্য টার্নিং ট্র্যাক চাইছে ধোনি, সেখানে যুবরাজের স্পিনটা খুব কাজে আসবে। তা ছাড়া ব্যাটসম্যান যুবরাজের একটা সহজাত ক্ষমতা আছে বোলারদের ঘুম কেড়ে নেওয়ার। নির্বাচকদের শুধু বলব, যুবরাজকে একটু বেশি সময় দিন। নিজেকে নিজের মতো একটু গুছিয়ে নিক ও।
প্রথম দুই টেস্টের পনেরো জন:
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), সহবাগ, গম্ভীর, মুরলী বিজয়, পূজারা, তেন্ডুলকর, কোহলি, যুবরাজ, রাহানে, জাহির, উমেশ যাদব, ইশান্ত, অশ্বিন, প্রজ্ঞান ওঝা ও হরভজন ।
|