|
|
|
|
টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিল প্রশাসন |
তৈরিই হয়নি মসজিদ, তবু ভাতা চালু ‘ইমাম’-এর নামে |
পীযূষ নন্দী • গোঘাট |
মসজিদ এখনও তৈরিই হয়নি। অথচ, সেই মসজিদের ইমাম হিসাবেই সরকারি ভাতার টাকা জমা হল এক জনের অ্যাকাউন্টে। তাঁকে ওই টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
ঘটনাটি গোঘাট ২ ব্লকের হাজিপুর পঞ্চায়েতের দাদপুর গ্রামের। সংশ্লিষ্ট বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত বলেন, “শেখ হাসিফুল রহমান নামে ওই ব্যক্তি ভুয়ো মসজিদের নাম দিয়ে নিজেকে সেখানকার ইমাম দাবি করে ভাতা পাচ্ছিলেন। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান সে ব্যাপারে সুপারিশও করেছিলেন। স্থানীয় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে দেখা যায়, ওখানে কোনও মসজিদই নেই। হাসিফুলকে এক মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যথাযথ তদন্ত না করে তাঁর নাম সুপারিশ করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে শো-কজ করা হয়েছে।”
দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসিফুল এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসাবেই পরিচিত। তাঁর সাফাই, “গ্রামের একটা বড় অংশের দাবি ছিল, গ্রামে যে ইদগাহ আছে, সেখানেই একটি মসজিদ স্থাপন করা হোক। নেতা হিসাবে গ্রামের মানুষ চেয়েছিলেন, আপাতত সরকারি ভাতার টাকাটা আমার নামেই আসুক। ওই টাকা মসজিদ নির্মাণে কাজে লাগবে। গ্রামবাসীদের চাপে বা এক ধরনের আবদারেই লজ্জাজনক এই কাজ হয়ে গিয়েছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ৬৪২০ টাকা হাসিফুলের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ওই তৃণমূল নেতা বলেন, “ভুলের জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়েছি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একটা টাকাও তুলিনি। পুরোটাই পড়ে আছে। টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম-কানুন জেনে তা দু’এক দিনের মধ্যেই ফেরত দেব।” বেআইনি কাজে তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়ে পড়া নিয়ে দলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নেব। এ রকম দৃষ্টান্ত থাকলে প্রশাসন অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”
কিন্তু বিনা তদন্তে কেন হাসিফুলের নাম ভাতা-প্রাপক হিসাবে সুপারিশ করলেন পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের মন্টু সাঁতরা? তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের চাপেই এমনটা করতে হয়েছিল। সে কথা ব্লক প্রশাসনকে বিস্তারিত জানিয়েছি।”
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মসজিদের ইমামদের জন্য মাসে আড়াই হাজার টাকা করে ভাতার কথা ঘোষণা করেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত প্রধানদের সংশ্লিষ্ট নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়। গোঘাট ২ ব্লকে মোট মসজিদের সংখ্যা ৫৩টি। প্রথম দফায় ৪৯ জন ইমামের নাম আসে। তার মধ্যেই ছিল হাসিফুলের নাম। সব ইমামদের নামেই ইতিমধ্যে প্রথম দফায় ৪ হাজার এবং পরের দফায় ২৪২০ টাকা ভাতা আসে। মাসখানেক আগে দাদপুরের কয়েক জন বাসিন্দা ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান, অন্যায় ভাবে ভাতার টাকা পাচ্ছেন হাসিফুল। তদন্তে নেমে অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পায় বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বিডিও জানান, আরও দু’একটি ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ আছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গোঘাট ২ ব্লকে দ্বিতীয় দফায় আরও ৫ জন ইমামের নাম ভাতা-প্রাপক হিসাবে পাঠানো হচ্ছে। ইমাম ছাড়াও যাঁরা মসজিদে আজান দেন, সেই মোয়াজ্জেমদেরও তালিকা পাঠানো হবে। তাঁরা মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। ওই তালিকা খতিয়ে দেখছে ব্লক প্রশাসন। |
|
|
|
|
|