|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দাবির প্রস্তুতি জেএমএমের |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • রাঁচি |
২৮ মাস পর এ বার মুখ্যমন্ত্রীর গদির জন্য দাবি জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। অন্য দিকে, সেই দাবি যে তারা মানতে তৈরি নয়, তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বও। ফলে ঝাড়খণ্ডে জোট সরকারকে ঘিরে ফের ঘনীভূত হতে চলেছে সঙ্কট।
২০১০ সালে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে গঠিত হয়েছিল এই জোট সরকার। জোট সরকারের গঠনের শর্ত উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবি তুলেছে জেএমএম। দলের প্রধান শিবু সোরেনকে সামনে রেখে জেএমএম-এর প্রথম সারির নেতারা বলছেন, “সরকার গঠনের শর্তই ছিল প্রথম ২৮ মাস মুখমন্ত্রীর কুর্সি থাকবে বিজেপির দখলে। পরবর্তী ২৮ মাস মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটি পাবে জেএমএম।” শিবু-ঘনিষ্ঠ, জেএমএমের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য তথা দলের মুখপাত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথায়, জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ ঝাড়খণ্ডের চলতি জোট সরকারের ২৮ মাস পূর্ণ হচ্ছে। অতএব, সরকার গঠনের শর্ত অনুযায়ী ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে জেএমএমের পাওয়ার কথা। শিবু সোরেন সম্প্রতি দুমকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় এই কথা ঘোষণাও করেছেন। শর্ত অগ্রাহ্য হলে? এই প্রশ্নে জেএমএম নেতৃত্বের বক্তব্য: “শর্ত অগ্রাহ্য করা হলে নতুন সরকার তৈরি করে শর্ত লঙ্ঘনের জবাব দিয়ে বিজেপিকে ‘রাজনৈতিক ভদ্রতা’ শিখিয়ে দেওয়া হবে।” বিজেপিকে বাদ দিয়ে কী ভাবে এবং কাদের নিয়ে নয়া সরকার গড়া হবে! তার গাণিতিক ব্যাখ্যা এখনই খোলাসা করতে চাইছে না জেমএমএম নেতৃত্ব। জেএমএম মুখপাত্রের জবাব: “তা জানতে হলে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
পাশাপাশি, জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কোনও পূর্ব-শর্তের কথাকে এখন আমলই দিচ্ছে না রাজ্য বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন: “জেএমএমের সঙ্গে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জোট সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কোনও আগাম শর্ত ছিল না। ২৮ মাস পরে মুখ্যমন্ত্রী বদলের বিষয়ে তখন কোনও আলোচনাই হয়নি। জেএমএমের এই কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক।” তিনি জানান, জেএমএম নেতা শিবু সোরেনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পর, মূলত রাষ্ট্রপতির শাসন এড়াতেই জেএমএমের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে রাজি হয়েছিল বিজেপি। ঝাড়খণ্ড বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ৮১। দলগত অবস্থা এ রকম: বিজেপি এবং জেএমএম, দুই দলেরই বিধায়ক সংখ্যা ১৮। কংগ্রেস-১৩, ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা-১১, অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন (আজসু)-৬, আরজেডি-৫, জেডিইউ-২, সিপিআই (এমএল)-১, নির্দল এবং অন্যান্য-৭ জন। রাজ্যের প্রবীণ রাজনীতিকদের মতে, জেএমএম-এর কথা মতো ২৮ মাসের সূত্র মেনে নেওয়া বিজেপির পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় বিজেপিকে এড়িয়ে জেএমএমের নেতৃত্বে নতুন জোট সরকার গড়তে হলে বর্তমান সরকারের অন্য শরিকদের সঙ্গে কংগ্রেস ও তার সহযোগী নির্দল বিধায়কদের সমর্থনও জরুরি।
ঝাড়খণ্ড রাজনীতির কুশীলবদের কথায়, চলতি জোট সরকার শপথ নেওয়ার পর সরকারের প্রধান দুই শরিক, বিজেপি এবং জেএমএম-এর মধ্যে কখনওই পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। নানান বিষয়ে টানাপোড়েনের শুরু হয় সূচনাতেই। চলতি বছরের গোড়ায় রাজ্যসভার ভোট এবং পরবর্তীকালে হাটিয়া বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামে বিজেপি-জেএমএম। পাশাপাশি, নানা বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়ে চলতে থাকে জেএমএম। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের আন্দোলন সমর্থন করে পরোক্ষে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের উপরেই চাপ বাড়ান স্বয়ং জেএমএম প্রধান। |
|
|
|
|
|