|
|
|
|
স্বামীজি-দাউদ তুলনা করে গভীর সঙ্কটে গড়কড়ী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নভেম্বর মাস যাঁরই হোক, সর্বনাশ কিন্তু নিতিন গডকড়ীর! এবং সেই সর্বনাশের আশঙ্কা তিনি আরও বাড়িয়ে দিলেন বুদ্ধির পরিমাপে স্বামী বিবেকানন্দ ও দাউদ ইব্রাহিমকে এক পংক্তিতে বসিয়ে।
এমনিতেই গদি টলমল। বুক ঠুকে বলতে পারছেন না, ডিসেম্বরের পরেও দলের সভাপতি থাকবেন কি না। দলে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ এতটাই যে, রাম জেঠমলানীর ছেলে মহেশ তো প্রতিবাদে আজ কর্মসমিতি থেকে ইস্তফাই দিয়ে বসলেন। বিজেপিতে খবর, মহেশ একাই নন, গডকড়ী সভাপতি পদ থেকে না সরলে যাঁরা একে একে নিজেদের পদ ছেড়ে চাপ বাড়াতে দ্বিধা করবেন না।
এমন যাঁর অবস্থা, সেই গডকড়ী আজ স্বামী বিবেকানন্দ আর মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমকে এক সারিতে বসিয়ে খুলে দিলেন নতুন বিতর্কের দরজা। বললেন, দু’জনের ‘ইন্টালিজেন্ট কোশেন্ট’ (আইকিউ) না কি সমান। যার ফল, কংগ্রেস তো বটেই, আক্রমণ আসতে শুরু করেছে দলের মধ্যে থেকেই। পরিস্থিতি এমনই যে, দলের সভাপতিকে সমর্থন করতে গিয়ে ঢোঁক গিলছেন মুখপাত্ররাও।
সদ্য ক’দিন আগে বিবেকানন্দ যুব বিকাশ যাত্রা সূচনা করে গুজরাত নির্বাচনের দামামা বাজিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি সুরজকুণ্ডে দলের পরিষদের বৈঠকের শেষ দিনেও লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতা বিবেকানন্দের পথে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিজেপির ‘প্রেরণার উৎস’ আরএসএস-ও বিবেকানন্দকে মর্যাদার শীর্ষে রাখে। এমনকী, সঙ্ঘে তাঁর গুরুত্ব আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেগড়েওয়ারের (গুরুজি) থেকে কোনও অংশে কম নয়।
এই পরিস্থিতিতে গডকড়ীর মন্তব্যের পরে বিজেপি নেতারাই এখন বলছেন, “বিজেপির মতো দল, তার সভাপতির মুখ থেকে এমন বিস্ময়কর বাণী! কোন মুখে আমরা তাঁকে সমর্থন করি?” গডকড়ী অবশ্য দিনের মধ্যে হাজার বার সাফাই দিচ্ছেন। বলছেন, “বিবেকানন্দের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের কোনও তুলনাই করিনি। আমি বলেছি, শুভবুদ্ধি প্রয়োগ করলে এক জন বিবেকানন্দের মতো সাধু হন, আর তা না করলে দাউদ ইব্রাহিম হয়ে যান।” কিন্তু গডকড়ী যেটা বলছেন না, সেটা হল: বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বিবেকানন্দ এবং দাউদের বুদ্ধিকে তিনি এক করে দেখিয়েছেন। |
|
দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, দু’জনের ‘আইকিউ’ যে সমান, তা গডকড়ীকে কে মেপে দিলেন? এক জন রাজনীতিক হয়ে তাঁকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিতেই বা কে বলেছেন? বিশেষ করে তিনি যখন এই মুহূর্তে নানাবিধ বেড়াজালে ঘিরে রয়েছেন। ঘরোয়া স্তরে এক বিজেপি নেতা বললেন, ভুলে গেলে চলবে না, জিন্না নিয়ে এক মন্তব্য করে সভাপতির পদ ছাড়তে হয়েছিল আডবাণীকে। জিন্না নিয়ে বই লিখে যশোবন্ত সিংহকেও দল ছাড়তে হয়েছিল। গডকড়ী কি সে সব ভুলে গিয়েছেন? নাকি আরএসএস-এর আশীর্বাদ মাথায় রয়েছে বলে তিনি সব কিছু ঊর্ধ্বে? বিজেপি যেটি প্রকাশ্যে বলতে পারছে না, সেই কাজটি করছেন কংগ্রেস নেতারা।
উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা জগদম্বিকা পাল প্রশ্ন তুলেছেন, “কোন ভিত্তিতে দাউদের সঙ্গে বিবেকানন্দের তুলনা টানলেন তিনি? আজ যদি আমি পাক সন্ত্রাসবাদী কাসভের সঙ্গে গডকড়ীর ‘আইকিউ’-এর তুলনা টানি, কাল বিজেপি কী বলবে?”
দিগ্বিজয় সিংহ টুইট করে গোটা বিষয়টিকে আরও খুঁচিয়ে দিতে চেয়েছেন। বলেছেন, “স্বামী বিবেকানন্দ আর দাউদ ইব্রাহিম সমান? নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর অনুগামীরা কিছু বলবেন?” কংগ্রেস নেতারা একে একে বলছেন, একমাত্র গডকড়ীই পারেন এই মন্তব্য করতে। কাল হয়তো বলে বসবেন, লেডি গাগা আর ঝাঁসির রানির ‘আইকিউ’ সমান। এই কথা বলার পরে গডকড়ীর ‘আইকিউ’ কত, তারও প্রমাণ মিলল। |
|
|
|
|
|