হলদিয়া বন্দরের তহবিল থেকে টাকা আনিয়ে সোমবারই মিটিয়ে দেওয়া হল কলকাতা বন্দরের ১৮ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পেনশন। কিন্তু এ মাসের মতো সঙ্কট মিটলেও পরের মাসগুলোয় বেতন-পেনশনের টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, বন্দর-কর্তারা তা ভেবে পাচ্ছেন না। অর্থের আশায় এ দিনই দিল্লি ছুটেছেন তাঁরা। যদিও জাহাজমন্ত্রকের তরফে সুরাহার কোনও দিশা এখনও মেলেনি বলে বন্দর-সূত্রের খবর।
মাস পয়লায় নিয়ম করে পেনশন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে যাওয়ার যে ‘ঐতিহ্য’ কলকাতা বন্দরের ছিল, গত দু’মাস যাবৎ তা ধাক্কা খেয়েছে। অক্টোবরে মূলত নেতাজি সুভাষ ডক, খিদিরপুর ডক এবং সদর অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়তে পড়তে ৮ তারিখ গড়িয়ে গিয়েছিল। নভেম্বরেও ৪ তারিখ পর্যন্ত তাঁরা টাকা পাননি। হলদিয়া বন্দর ও অন্যান্য অফিসের প্রায় ১৭ হাজার পেনশনভোগীর অ্যাকাউন্টে অবশ্য যথা সময়ে টাকা জমা পড়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে ‘ব্যাঙ্কের গাফিলতির’ কথা বলা হলেও বন্দরের অন্দরের খবর: মাস পয়লায় সকলের বেতন-পেনশন মেটানোর মতো অর্থ হাতে ছিল না। তাই ঠিক হয়, ধাপে ধাপে টাকা দেওয়া হবে।
কিন্তু ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আসতে এ দিনই তড়িঘড়ি বকেয়া পেনশন মিটিয়ে দেওয়া হয়। আর তার ১৫ কোটি টাকা এসেছে সেই হলদিয়া বন্দরের তহবিল থেকেই। এ মাসের মতো সঙ্কট সামলানো গেলেও বাড়তি আয়ের সংস্থান না-হলে পরের মাসগুলোয় কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা ভেবে বন্দর-কর্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। বন্দর-সূত্রের খবর: একেই ড্রেজিং-ভর্তুকির চারশো কোটি টাকা জাহাজ মন্ত্রকের কাছ থেকে আসেনি। পলি কাটতে হচ্ছে নিজস্ব খরচে। উপরন্তু পণ্য আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় রোজগার মার খাচ্ছে। আর সম্প্রতি এবিজি-পর্বের জেরে হলদিয়ার ব্যবসা ব্যাহত হওয়ায় অবস্থা আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে শুধু অক্টোবরেই বন্দর ৭ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে সূত্রটির দাবি।
তাই ভবিষ্যতের অর্থ সংস্থান নিয়ে দিশেহারা বন্দর-অফিসারেরা এ দিনই দিল্লি গিয়ে জাহাজমন্ত্রকে দরবার করেছেন। মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (বন্দর) মুরুগানন্দনের সঙ্গে দিনভর বৈঠক করেছেন এক দল অফিসার। যদিও ড্রেজিং-ভর্তুকি বা অন্যান্য খাতে এখনই কিছু পাওয়ার আশ্বাস মেলেনি। এমতাবস্থায় হলদিয়া-ত্যাগী এবিজি’র থেকে জরিমানা আদায় করে অর্থ-সঙ্কট মোকাবিলার একটি ‘বিকল্প’ পরিকল্পনা করেছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ।
বন্দরের এক সূত্র জানাচ্ছেন, এবিজি-কর্তৃপক্ষের কাছে জরিমানা বাবদ ১৪০-১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হবে। এবিজি-র সঙ্গে বন্দরের চুক্তি ছিল দশ বছরের। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তারা হলদিয়ার ২ ও ৮ নম্বর বার্থে মাল খালাস বন্ধ করায় আজ পর্যন্ত যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, এবং চুক্তি ভেঙে ৮ বছর আগেই তারা চলে যাওয়ার খেসারত মিলিয়ে এই হিসেব। যদিও বন্দরের এক কর্তার মতে, “টাকাটা সহজে আদায় করা যাবে না। এবিজি-ও মামলা করে বন্দরের কাছে প্রায় একই ক্ষতিপূরণ চাইবে। তার উপরে ছ’টা মোবাইল হারবার ক্রেন-সহ ওদের প্রায় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে হলদিয়ার ডকে!”
সব মিলিয়ে বন্দরের আর্থিক সমস্যার আশু সমাধানের কোনও ইঙ্গিত এখনও নেই। এরই মধ্যে কলকাতা বন্দরের স্থায়ী চেয়ারম্যানের পদটি পূরণ করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস অফিসার রাজপাল সিং কাঁহালোর এই পদে বসার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অ্যাপয়ন্টনমেন্ট কমিটিতে তাঁর নামটি জাহাজ মন্ত্রক এত দিন পাঠায়নি। এ বার জাহাজমন্ত্রী জি কে ভাসান প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। |