এক রাতের বৃষ্টিতেই প্রকাশ্যে চলে এল রামপুরহাট শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশা। রবিবার রাতভর বৃষ্টিতে শহরে কোথাও ঘরের ভেতরে জল ঢুকে পড়ল, কোথাও বা ভেঙে পড়ল পুরসভার নবনির্মিত রাস্তাই! বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কিছুটা অংশও। সড়কের ধারে থাকা দোকানে, গুদামে জমা জল ঢুকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বেশ কিছু ব্যবসায়ীও।
তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভার পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “শহরের নিকাশি ব্যবস্থার জন্য মাস্টারপ্ল্যান দরকার। পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যে পরিমাণ টাকা দরকার তা পুরসভার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব নয়।” |
কিন্তু পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থার জন্য এতদিন যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হল, তারই বা কোনও ফল মিলবে না কেন? অশ্বিনীবাবুর দাবি, “নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত নিকাশি নালা সাফ করার প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য যত কর্মী লাগবে তা পুরসভার নেই।” পুরপ্রধানের এই বক্তব্য অবশ্য শান্ত করতে পারছে না শহরবাসীকে। রাতের বৃষ্টিতে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোটাস প্রেস এলাকার প্রায় ২৫টি বাড়িতে জল ঢুকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জন বর্মনের অভিযোগ, “নিকাশি ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান দরকার। অপরিকল্পিত ভাবে পুরসভা নিকাশী ব্যবস্থা করায় অল্প বৃষ্টিতেই এলাকায় রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।” একই অবস্থা পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির নিজের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকাতেও দেখা গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশী নালা সাফাই না করায় বাসস্ট্যান্ড চত্বর জলে ডুবে যায়। ফলে বাসস্ট্যান্ডের পিছনের এলাকার বাসিন্দারা অল্প বৃষ্টিতেও প্লাবিত হন।
এ দিন সকালে দেখা যায়, রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাড়গ্রাম মোড়, পেট্রোল পাম্প মোড় এলাকা হাঁচু সমান জলে ডুবে রয়েছে। জল বইছে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে। জাতীয় সড়কের পাশে একটি সাইকেল দোকানের ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “নিকাশী ব্যবস্থা বলে এখানে কিছু নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমার দোকানে জল ঢুকে যায়। ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে।” তাঁর ক্ষোভ, “ক্ষতি তো আমাদের হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমস্যার কথা শুনছে কে?” অন্য এক ব্যবসায়ী রবি গুপ্তের অভিযোগ, “গুদামের ভিতরে জল ঢুকে গিয়েছে। সেখানে টিভি, রেফ্রিজারেটর, এসি মেশিন, ওয়াশিং মেশিন রাখা আছে। কিন্ত জলে সে সব ডুবে গিয়েছে।”
শুধু ওই সব এলাকাই নয়। পুরসভার গাফিলতিতে জল জমেছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মতো উঁচু এলাকাতেও। এমটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের। রাতভর বৃষ্টি দেখিয়ে দিল পুরসভার গাফিলতি। ৯, ১১, ১৬, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জল ঢুকেছে বলে খোদ পুরপ্রধানই জানিয়েছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশী নালা সাফ করার জন্য ১৭টি ওয়ার্ডে ৩৭ জন অস্থায়ী কর্মী চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করছেন। রয়েছে স্থায়ী সাফাই কর্মীও। এ ছাড়া তিনটি ট্রাক্টরে জঞ্জাল তুলে ফেলা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও পুরসভার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে। তাই এই দুর্ভোগ থেকে কবে রামপুরহাটবাসী মুক্তি পাবেন, তার জবাব আপাতত জলেই। |