সরকারি নার্সদের সালোয়ারে
সায় স্বাস্থ্য-কর্তাদেরও
হাঁটু ঝুলের সাদা মিডি বা সাদা শাড়ি, কোমরে সাদা বেল্ট, মাথায় সাদা টুপি, পা ঢাকা নিউকাট জুতো, হাতের ট্রেতে রাখা ওষুধ। নার্স বা সিস্টারদের পরিচিত ছবি। সেই চেনা ছবিটা বদলানোর সবুজ সঙ্কেত দিতে চলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, প্রচলিত এই পোশাকের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের নার্সদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। কাজের পোশাক হিসাবে আর শাড়ি বা মিডি পরবেন না বলে সরকারকে লিখিত জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পোশাক-পরিবর্তনে রাজি স্বাস্থ্য-কর্তারাও। শুধু সরকারি সিলমোহরটুকু দেওয়া বাকি।
মৌখিক আবেদন-নিবেদন বাম জমানা থেকেই চলছিল। এ বার দুর্গাপুজোর ঠিক আগে সরকারি হাসপাতালের প্রায় ২৬ হাজার নার্স ‘ইউনিফর্ম’ হিসাবে সালোয়ার-কামিজের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরে। জানিয়েছেন, যুগ ও কাজের ধাঁচের পরিবর্তনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তাঁদের পোশাকেরও পরিবর্তন হোক। তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়ে, মেঝে-ভর্তি রোগী নিয়ে শাড়ি বা মিডিতে কাজ করতে তাঁরা চূড়ান্ত অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। পোশাক সাফ রাখাও দুঃসাধ্য। এই অবস্থায় সালোয়ার-কামিজের দাবি না-মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন নার্সরা।
নার্সদের পোশাক কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক বা প্রতিবাদ এই প্রথম নয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পৃথিবীর একাধিক দেশে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ হয়েছে। ২০১১ সালের এপ্রিলে মহারাষ্ট্রের কয়েক হাজার সরকারি নার্স আন্দোলনে নেমে কিছু দিন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২০০৪ থেকে সরকার তাঁদের খাকি রঙা সালোয়ার কামিজ পরার অনুমতি দিলেও আচমকা সেই পোশাক বদলে নার্সদের সাদা শাড়ি বা মিডি পরে কাজে আসতে বলা হয়েছিল।
ইউনিফর্মের ইতিহাস
• ১৮৬০ সালে নার্সদের প্রথম ইউনিফর্ম লন্ডনে ‘নাইটিঙ্গল ট্রেনিং স্কুল অফ নার্সেস’-এ
• তৈরি করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গলের ছাত্রী মিস ভ্যানরেনসেলায়ের
• পোশাক ছিল গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা, ঘেরওয়ালা, মাথায় দড়ি বাঁধা টুপি
• প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘের কমে, অ্যাপ্রন চালু
• দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঝুল হাঁটুর নীচ পর্যন্ত
• পঞ্চাশের দশকে পোশাক হয় হাফহাতা
• ষাটের দশক থেকে অনেক দেশে রঙিন পোশাক
এ বছরের ১০ অক্টোবরের ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিড ওয়েস্ট অঞ্চলের পাঁচটি হাসপাতালে নার্সদের পোশাক নিয়ে বিশেষ নির্দেশ জারি করলেন কর্তৃপক্ষ। বলা হল, ইউনিফর্মের গলার অংশ যেন খুব কাটা না হয়, পোশাক যেন শরীরের সঙ্গে আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে না থাকে এবং ঝুল যেন হাঁটুর বেশি ওপরে না-ওঠে। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে নার্সরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি নার্সদের বৃহত্তম সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শিখা মুখোপাধ্যায় জানালেন, প্রথমে তাঁদের দাবি ছিল বেদানা রঙের সালোয়ার কামিজ। কারণ নার্সদের কাজে পোশাকে অনবরত ওষুধ, রক্তের ছিঁটে লাগে। সাদা পোশাক রক্ষা করা দুঃসাধ্য। কিন্তু রঙিন পোশাকে সরাসরি না করে দেয় সরকার। অগত্যা রঙের ব্যাপারে তাঁরা আপসে রাজি হলেও সালোয়ার কামিজের দাবিতে অটল থাকেন।
শিখাদেবীর কথায়, “স্মারকলিপিতে নার্সরা লিখে দিয়েছেন, সালোয়ার কামিজ চাই। তার উপরে আমরা ল্যাবকোট পরব। তাতে নেমপ্লেট থাকবে। সঙ্গে পা ঢাকা জুতো আর আঁটো করে বাঁধা চুল। বেল্ট, টুপি পরব না। ওগুলির কোনও দরকার নেই।” নার্সদের আরও যুক্তি, “শাড়ির নীচের দিকে হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকা ওষুধ, কফ-থুতু-রক্ত লেগে যায়। রোজ তা পরিষ্কার করা শাস্তির মতো মনে হয়। তা ছাড়া, তা থেকে সংক্রমণও ছড়ায়।” উপস্বাস্থ্য অধিকর্তা (নার্সিং) সান্ত্বনা কুণ্ডু এ ব্যাপারে বলেন, “নার্সদের স্মারকলিপিও জমা পড়েছে। ওঁদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই সালোয়ার কামিজে অনুমতি পেয়ে যাবে।”
তবে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্কফোর্সের প্রধান চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র মনে করছেন, শাড়ি বা মিডি একেবারে তুলে না-দিয়ে বিকল্প হিসেবে রাখা হোক। তাঁর কথায়, “শাড়ি, মিডির সঙ্গে সালোয়ার বা ট্রাউজার-হাফহাতা শার্ট চালু হোক। প্রত্যেক পোশাকের রং হোক সাদা। যার যেটা ইচ্ছে সেটা পরবেন।” ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত আবার বলেন, “নার্সদের পোশাক বানাতে বললে সালোয়ার কামিজই বানাতাম। কারণ আদ্যন্ত ভারতীয় শালীন পোশাক হওয়ার পাশাপাশি এটা খুব সাবলীলও। পরে দৌড়ঝাঁপ করা যায়। সালোয়ারের জন্য দু’পা আলাদা করার সুবিধা। উড়নিটা বাদ দেওয়া দরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.