নিয়োগ পর্ষদ গঠনই হয়নি, কর্মীর অভাবে বেহাল স্বাস্থ্য
মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতাল সবই ডাক্তারের অভাবে ধুঁকছে। নার্সের হাজার হাজার শূন্য পদ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে দৈনন্দিন কাজ আটকে থাকছে। কিন্তু কোথাও কোনও নিয়োগ নেই। কবে হবে, সেটাও কেউ জানে না। সরকার গঠনের পরে যে হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কর্মী নিয়োগের পর্ষদ) গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা এখন বিশ বাঁও জলে। কবে এই বোর্ড গঠন হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য-কর্তারাও।
অথচ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগে অযথা দেরি হওয়ার কারণ দেখিয়েই নিজস্ব নিয়োগ পর্ষদ গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। বাস্তবে তাঁর সেই বোর্ডই এখন নিয়োগের সমস্ত প্রক্রিয়া আটকে রেখেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এমনিতেই স্বাস্থ্যে শূন্য পদের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে সামনের সারিতে। তার উপরে প্রশাসনিক কারণে এ ভাবে মাসের পর মাস নিয়োগ আটকে থাকলে তার ফল মারাত্মক হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্তরে শূন্য পদ থাকায় ধাক্কা খাচ্ছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের কাজকর্ম। ইতিমধ্যেই রাজ্যকে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি এবং স্বচ্ছতা আনার জন্যই নিজস্ব রিক্রুটমেন্ট বোর্ড তৈরি করা জরুরি ছিল। চিকিৎসক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সব স্তরেই স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ ওই বোর্ডের মাধ্যমে হবে। ”
কিন্তু কবে তৈরি হবে ওই বোর্ড? স্বচ্ছতা আনতে গিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্মই তো বন্ধ হওয়ার জোগাড়! চন্দ্রিমাদেবীর জবাব, “ভাল কাজে খানিকটা সময় লাগে। তাই কবে বোর্ড কাজ শুরু করবে, তা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। প্রক্রিয়া চলছে, এটুকু জানাতে পারি।”
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একটা বড় অংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, পর্ষদের ভবিষ্যৎ ঘোরতর অনিশ্চিত। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এখনও কিছুই হয়নি। কারা পর্ষদে থাকবেন, সেটাই চূড়ান্ত নয়। কাজের পদ্ধতি শুরু হওয়া তো অনেক দূরের কথা। অথচ এ ভাবে চলতে থাকলে আর মাস কয়েকের মধ্যে গোটা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মুখ থুবড়ে পড়বে।”
শুধু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল দশাই নয়, দফতরের এই গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে ইতিমধ্যেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণীর ভবিষ্যৎ। তাঁরা সকলেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন। সফলদের নামের তালিকা প্রকাশ হয় ২০১১-র জুন মাসে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য মোট ২৮১৭ জন প্রার্থীর একটি প্যানেল তৈরি হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরে আর বিষয়টি এগোয়নি। পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরির নিয়োগপত্র না পেয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী। স্বাস্থ্যভবনে স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে হাজারো আবেদন নিবেদনেও কাজ হয়নি।
বন্ধ নিয়োগ
কোন পদ কত শূন্য
শিক্ষক-চিকিৎসক
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
মেডিক্যাল অফিসার
নার্স
ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান
চতুর্থ শ্রেণির কর্মী
৫০০
১০০০
১৫০০
২৫০০
১০০০
৩০০০
প্রাথমিক স্বাস্থ্যের হাল
ডাক্তার ছাড়া চলছে
এক জন চিকিৎসক সম্বল
ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই
ফার্মাসিস্ট ছাড়া চলছে
৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
৭৩৬টি কেন্দ্রে
৯০৪টি কেন্দ্রে
৩৫৭টি কেন্দ্র
* (সূত্র- রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর)
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত তিন বছর স্বাস্থ্যে কোনও নিয়োগ হয়নি। অথচ প্রতি বছর কয়েক হাজার কর্মী বিভিন্ন বিভাগ থেকে অবসর নিয়েছেন। বহু কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে। ওই সব শূন্য পদে কোনও নিয়োগ হয়নি।
এসএসকেএম হাসপাতালের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, “হাসপাতালে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে। বাড়ছে। অথচ ডাক্তার, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বাড়ছে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই পরিষেবার মান তলানিতে ঠেকছে। শুধু আমাদের হাসপাতালেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ৫০০টি পদ খালি পড়ে রয়েছে। তাই ট্রলি ঠেলার লোক পাওয়া যায় না। ওয়ার্ড পরিষ্কার হয় না। হাসপাতাল চত্বর জঞ্জালের স্তূপের চেহারা নেয়।” একই হাল অন্যত্রও।
স্বাস্থ্য-কর্তারা মানছেন, সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি গ্রামীণ ও জেলা স্তরের পরিকাঠামোর। কোথাও কোথাও ডাক্তার ছাড়াই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে। কোথাও পরীক্ষানিরীক্ষার যন্ত্র থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই, তাই রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এই হয়রানির ছবি রাজ্য জুড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.