দুর্গাপুরের নাচন রোডে নার্সিংহোমে জন্মানো মাস দুয়েকের একটি শিশুকন্যার খোঁজ মিলছে না। শিশুর বাবা-মায়ের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মেছে জানিয়ে নার্সিংহোমের লোকজনই তাকে ছেড়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু পরে এক দম্পতির কাছে তাকে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আজ, শুক্রবার বর্ধমান জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যেরা শিশুটির খোঁজে ওই নার্সিংহোমে যেতে পারেন। জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যা শিখা আদিত্য বলেন, “বৃহস্পতিবার জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগ আমাদের চিঠি পাঠিয়ে নার্সিংহোম থেকে শিশু বেপাত্তা হওয়ার তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আমরা খোঁজ নেওয়াও শুরু করেছি।”
পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের সন্দেহ, বেআইনি ভাবে ওই শিশুটিকে কোনও নিঃসন্তান দম্পতিকে দান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “দিন কয়েক আগে একটি বেসকরারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঘটনাটি মহকুমা প্রশাসনের নজরে আনে। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক তদন্ত করিয়েছেন। তাঁর কাছে একটি রিপোর্টও জমা পড়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, নার্সিংহোমের যোগসাজশেই শিশুটিকে আইন ভেঙে কোনও দম্পতিকে দেওয়া হয়েছে, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নার্সিংহোমের ডিরেক্টর মালিনী দাস অবশ্য দাবি করেন, “শিশুটির বাবা-মা নিজেরাই তাকে নিয়ে গিয়েছেন। নার্সিংহোমের সুনাম নষ্ট করার জন্যই অমূলক অভিযোগ করা হচ্ছে।”
গত ২৩ অগস্ট একটি সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের জেলা কো-অর্ডিনেটর শুভজিৎ দে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষারানির কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, নাচন রোডের নার্সিংহোমে এক সদ্যোজাত পড়ে রয়েছে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। তাকে অবৈধ ভাবে কাউকে দত্তক দেওয়া বা পাচারের চেষ্টা হচ্ছে। মহকুমাশাসক তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ১৬ অক্টোবর দুর্গাপুর থানার আওতায় থাকা ‘এ জোন’ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত এসআই মনোরঞ্জন মণ্ডল তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, গত ২১ জুলাই দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গির টিকলিয়া বস্তির সরিফা খাতুন ওই নার্সিংহোমে শিশুকন্যার জন্ম দেন। তিনি ও তাঁর স্বামী শেখ নজরুলের কথা অনুযায়ী, নার্সিংহোমের লোকজন তাঁদের জানায়, শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মেছে। তাকে বাঁচাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাঁদের ইতিমধ্যেই ছ’টি সন্তান আছে। অভাবের সংসারে বিপুল অর্থব্যয়ের সামর্থ্য নেই। তাই গত ২৪ জুলাই তাঁরা শিশুটিকে নার্সিংহোমে রেখে বাড়ি চলে যান।
তদন্তকারী অফিসার রিপোর্টে আরও জানিয়েছেন, ২০ অগস্ট সন্ধ্যায় নার্সিংহোমে গোলমালের খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। তখন স্থানীয় এক দম্পতি একটি শিশুকে চাইতে সেখানে এসেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৫ অগস্ট এলাকার এক মহিলা এক আত্মীয়কে দেখতে ওই নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন। এক নার্স ও এক কর্মী তাঁকে শিশুকন্যাটির কথা জানিয়ে বলেন, শিশুটিকে তাঁরা কোনও নিঃসন্তান দম্পতিকে দিতে চান। ১৮ অগস্ট ওই মহিলাই এক দম্পতিকে নিয়ে আসেন। নার্সিংহোমের এক কর্মী তাঁদের জানান, শিশুটিকে কবে দেওয়া যাবে তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে। পরের সন্ধ্যায় তাঁদের ফের আসতেও বলা হয়। শেষমেশ ২০ অগস্ট শিশুটিকে নিতে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে দিন তাঁরা নার্সিংহোমে গেলে বলা হয়, শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মালিনীদেবী অবশ্য দাবি করেন, “পরিবারটি দুঃস্থ। শেষ দিকে ওদের কাছে পয়সা ছিল না। আমরা বিনা পয়সায় অক্সিজেন ও অন্যান্য পরিষেবা দিই। পরে ওরা শিশুটিকে নিয়ে চলে যায়।” প্রায় এক মাস পরে শিশু পাচারের অভিযোগ ওঠায় তিনি পাল্টা বলেন, “বাচ্চা আটকে রাখলে মা-বাবা তো সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেন! আমরা পুলিশকে সব জানিয়েছি।” তাঁর দাবি, “মাত্র চার বছরের মধ্যে এই নার্সিংহোম নাম করেছে। দুঃস্থদের অল্প টাকায় চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ায় রোগীর লাইন লেগে আছে। ব্যবসায়িক রেষারেষি বা অন্য কোনও কারণে কারও প্ররোচনায় ওই দম্পতি বা নার্সিহোমের কোনও কর্মী অভিযোগ থাকতে পারেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে।” চেষ্টা করেও এ দিন শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |