ভাড়া বেড়েও সমস্যা মিটল না বাস -ট্যাক্সির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকার ভাড়া বাড়ানোর ২৪ ঘণ্টা পরেও স্বাভাবিক হল না বেসরকারি বাস চলাচল। বৃহস্পতিবারও পর্যাপ্ত বাস, মিনিবাস নামল না রাস্তায়। যাত্রীরা নাকাল হন ট্যাক্সির নতুন ভাড়া দিতে গিয়েও। হিসেবের জটিলতায় অনেক ট্যাক্সিচালক যাত্রীদের কাছে বাড়তি টাকা চান বলে অভিযোগ। যার জেরে বহু ক্ষেত্রেই বচসা হয় চালক ও যাত্রীদের মধ্যে।
ভাড়া বাড়ার পরেও এ দিন সব বাস বেরোলো না কেন? মালিকদের বক্তব্য, বিভিন্ন ‘রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’ ভাড়ার তালিকা তৈরি করে উঠতে পারেনি। তাই এ দিনও তাঁদের পুরনো ভাড়াতে বাস চালাতে হয়। যাঁরা লোকসানের জন্য এত দিন বাস বসিয়ে রেখেছিলেন, তাঁরা নতুন ভাড়া নিতে পারবেন না বলেই বাস চালাননি। এ ছাড়া, বেশ কিছু দিন না চলার জন্য কিছু বাসের যন্ত্রাংশও খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে সব না বদলালে বাস চালানো যাবে না। বসে যাওয়া বাসগুলির চালক, কন্ডাক্টরেরাও অন্য কাজে চলে গিয়েছেন। তাঁরা ফিরলে বাস চলবে।
কেন নতুন ভাড়ার তালিকা হাতে পাননি বাস -মিনিবাসের মালিকেরা?
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “নতুন ভাড়ার তালিকা শুক্রবারের মধ্যেই ‘রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’ থেকে দিয়ে দেওয়া হবে।” এ ক্ষেত্রে কত দিন পরে স্বাভাবিক হবে বাস চলাচল? বাস মালিকদের আশা, দিন সাতেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। মালিকদের বক্তব্য, ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকার যদি আগেই নিত, তা হলে পরিবহণ শিল্প এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ত না। |
ভাড়াবৃদ্ধির পরে ট্যাক্সিমালিকেরা অবশ্য অন্য সমস্যায় পড়েছেন। ট্যাক্সির নতুন ভাড়ার ‘মিটার প্রিন্ট -আউট’ এখনই পাবেন না যাত্রীরা। এর জন্য ওই বর্তমান মিটারগুলির সামান্য পরিবর্তন করতে হবে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, ট্যাক্সির মিটার নতুন ভাড়া অনুযায়ী ‘ক্যালিব্রেশন’ করে নেওয়ার জন্য মালিকদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ভাড়া নিয়ে যাতে ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে যাত্রীদের গোলমাল না হয়, সে জন্য ট্যাক্সি সংগঠনগুলি নতুন ভাড়ার তালিকা তৈরি করে গাড়িতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যাত্রীরা ওই তালিকা দেখে ভাড়া দেবেন। মহম্মদ আসগর নামে তিলজলার এক ট্যাক্সিচালক বলেন, “ছাপানো তালিকা না পেলে নতুন ভাড়া আদায় করতে সমস্যা হচ্ছে। মিটার ঠিক না করালে যাত্রীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়তে হবে। সব ঠিক করতে আরও দু’দিন লেগে যাবে।”
তবে সরকারের ঠিক করা নতুন ব্যবস্থায়, ভাড়া হিসেব করতে সমস্যা হবে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ধরা যাক, ফুলবাগান থেকে চাঁদনি চক পর্যন্ত আসা ট্যাক্সির মিটার দেখাচ্ছে ৩৭ টাকা। সেই সংখ্যাকে ২ .৪ দিয়ে গুণ করে তার সঙ্গে ১ যোগ করে যে সংখ্যা হবে, যাত্রীকে সেই টাকা দিতে হবে। দেখা যায়, অধিকাংশ ট্যাক্সিচালকের কাছে নতুন ভাড়ার তালিকা নেই। অনেকেই সঠিক হিসেব কষতে পারছেন না। যাত্রীরাও চটজলদি হিসেব কষে উঠতে পারছেন না। যার জেরে অনেক জায়গায় চালক ও যাত্রীরা বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, অধিকাংশ চালক ভাড়ার ছাপানো রসিদ দেন না। তাই ভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়বে। ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ -সম্পাদক সুমন গুহ বলেন, “নতুন তালিকা যে জটিল, মুখ্যমন্ত্রীকে তা লিখিত ভাবে জানিয়েছি। অনুরোধ করেছি, পরিবহণ দফতর মারফত দ্রুত নতুন ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করতে।”
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিবহণের হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার প্রথম ধাপে আমরা বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করেছিলাম। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে আয়বৃদ্ধি। তৃতীয় ধাপে সিএসটিসি, সিটিসি, ডব্লিউবিএসটিসি তিনটিকে মিলিয়ে একটিই পরিবহণ সংস্থা গড়া হবে। এই সংস্থা গঠনের খরচ আসবে তিনটি পরিবহণ সংস্থার হাতে থাকা উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করে।
এ দিকে, ক্রমাগত ট্যাক্সি প্রত্যাখানের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার অভিযান চালিয়ে ৪০টির বেশি মামলা রুজু করে চালকদের জরিমানা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। |