পাল্টা প্রচারে শুভেন্দুরাও
তৃণমূলের হাত স্পষ্ট, সরব কংগ্রেস-সিপিএম
লদিয়া বন্দরে এবিজি-কে ঢুকতে না-দেওয়ার জন্য তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী আড়াই বছর আগেই যে হুমকি দিয়েছিলেন, সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে একযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। হলদিয়া-কাণ্ডের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের বক্তব্য, হলদিয়া থেকে এবিজি বিতাড়নে গোড়া থেকেই যে তৃণমূলের ভূমিকা ছিল, তা এখন দিনের আলোর চেয়েও স্পষ্ট!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, হলদিয়ার ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারের অনুশোচনা হওয়া উচিত। প্রদীপবাবুর কথায়, “দেশের শিল্পপতি, উদ্যোগপতিদের কাছে বার্তা গিয়েছে বাংলায় শিল্প করতে আসা নিরাপদ নয়। বাংলায় শিল্প আনতে হলে সরকারের নতজানু হয়ে বলা উচিত, হলদিয়ায় ভুল হয়েছে! আমরা ক্ষমা চাইছি। এই ঘটনা আর হবে না!” তাঁর মতে, “হলদিয়া থেকে এবিজি-র চলে যাওয়াটা মূল বিচার্য বিষয় নয়। বিষয়টা হচ্ছে, যারা হামলা করল, সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাংলার মাটি থেকে শিল্প উঠে যাবে কি না, এখন এটাই বিচার্য হয়ে উঠেছে!”
রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে কি না, শুভেন্দুর হুমকির প্রেক্ষিতে সেই প্রশ্নই তুলেছেন কংগ্রেস নেতা নির্বেদ রায়। তাঁর মন্তব্য, “হলদিয়া তো প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে কোনও দুর্গম দ্বীপ নয়! পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের একটি অঞ্চল। সেখানে বসে এই ধরনের কথা বলা যে উচিত নয়, তা বোঝার মতো বিদ্যা-বুদ্ধি থাকা দরকার ছিল!”
কংগ্রেস-সিপিএমের আক্রমণের মুখে পড়ে তৃণমূলও এ বার হলদিয়া নিয়ে পাল্টা প্রচারে নামছে। সাংসদ শুভেন্দু জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার রানিচক থেকে তাঁদের প্রচার শুরু হবে। তার পরে পর্যায়ক্রমে গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তাঁদের সমাবেশ হবে। তৃণমূলপন্থী বিদ্বজ্জনেদের একটি প্রতিনিধিদল আজই হলদিয়া যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলের সদস্য, এক মানবাধিকার কর্মীর বক্তব্য, “হলদিয়া নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সিঙ্গুর থেকে টাটার চলে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে। আমরা সরেজমিনে দেখতে চাই, ওখানে শ্রমিকদের কী অবস্থা। ওই সংস্থাটি (এবিজি) শ্রমিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? দেখে আসার পরে আমাদের বক্তব্য প্রকাশ করব।” হলদিয়ার কথা মনে হল কেন? ওই মানবাধিকার কর্মীর কথায়, “বিভিন্ন রকম প্রচারে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে। এর আগে আমরা এ ভাবেই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম বা লালগড়ে পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম।”
বিদ্বজ্জনেদের এই হলদিয়া অভিযান নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন প্রদীপবাবু। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কটাক্ষ, “বিদ্বজ্জনেরা একটা করে পদক্ষেপ করলেই কি একটা করে শিল্প হবে? হাওড়াকে এক কালে প্রাচ্যের শেফিল্ড বলা হত! এখন মরুভূমি! তা হলে সেখানেও তাঁদের নিয়ে যাওয়া হোক!” আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি হিসাবে প্রদীপবাবু অবশ্য তাঁদের শ্রমিক সংগঠনকেও হলদিয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে যেতে বলেছেন। পরে তিনি নিজেও যাবেন।
হলদিয়া-কাণ্ডে গত কয়েক দিন ধরে বিমান বসুরা যা বলে আসছিলেন, শুভেন্দুর ২০১০ সালের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসায় সেই দাবিই মান্যতা পেয়েছে বলে মনে করছে সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “হলদিয়া থেকে এবিজি-কে তাড়ানোর ঘটনায় তৃণমূলের যে ভূমিকা আছে, ঘটনা থেকেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল। আমরাও তা-ই বলে আসছিলাম। এখন আরও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল! অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কিছুই ঘটেনি! এক দিকে ওঁরা (তৃণমূল) অন্ধকারের কাজকর্ম করছেন আর অন্য দিকে সব দিনের আলোর চেয়েও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে!”
সিপিএমের অভিযোগ, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের স্বাভাবিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারেরও ব্যর্থতা এবং বঞ্চনা আছে। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর কথায়, “সে সবের বিরুদ্ধে কথা না-বলে ওঁরা বন্দরকেই আরও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন!” হলদিয়া-কাণ্ডে তৃণমূলের সাংসদদের ভূমিকা জড়িয়ে যাওয়ায় সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হতে চায় সিপিএম। সংসদের অধিবেশনে এবং সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে বিষয়গুলি উত্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এই সংক্রান্ত কাগজপত্র দলের রাজ্যসভার দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরির কাছে পাঠিয়েছে আলিমুদ্দিন। রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী এবং সিপিএমের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেনও এ দিন বলেছেন, “হলদিয়ায় যা হল, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে রাজ্যের অর্থনীতিতে।”
সাংগঠনিক ভাবেও সিপিএম হলদিয়া-কাণ্ডকে কাজে লাগাতে চাইছে। দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই ৫ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে ‘হলদিয়া দিবস’ পালন করবে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “সিঙ্গুর থেকে টাটাকে তাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করেছিল তৃণমূল। হলদিয়া থেকে এবিজি-কে তাড়ানোয় কিছু মানুষ তো কর্মচ্যুত হলেনই। এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাবে আগামী দিনেও রাজ্যে কমর্সংস্থান ধাক্কা খাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.