জমির বদলে চাকরি দিতে পারবে না রেল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রেল প্রকল্পের জন্য জমি দিলে পরিবার পিছু এক জনকে রেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রেলের নতুন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিলেন, ওই কথা রাখা অসম্ভব।
অধীরের কথায়, “সত্যি কথাটা সত্যি করে বলা ভাল। রেল প্রকল্পের জন্য জমি দিলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমির মালিক ক্ষতিপূরণ অবশ্যই পাবেন। কিন্তু সবাইকে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা রেলের নেই।”
পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার-সহ রেল কর্তাদের ইতিমধ্যেই দিল্লিতে আসার নির্দেশ দিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গেই আজ অধীরবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে কেন্দ্র মোটেই কোনও রকম বঞ্চনা করতে চাইছে না। অধীরের দাবি, সেই সংকীর্ণ রাজনৈতিক মনোভাব কংগ্রেসের নেইও। রেল মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় রাজ্যের জন্য এমন কিছু রেল প্রকল্প (রেল কারখানা, বিপণন কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম) ঘোষণা করা হয়েছিল, যা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে হওয়ার কথা। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের দিক থেকেও আগ্রহের অভাব রয়েছে। অধীর এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে। কেন্দ্রও তার সাধ্যমতো করবে।” রাজ্য সরকারের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে? অধীরের বক্তব্য, রাজ্যে রেল প্রকল্প রূপায়ণের পথে সব থেকে বড় সমস্যা হল জমি অধিগ্রহণ। এবং রেলমন্ত্রী মমতার আমলে জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কথা ভাবনাচিন্তা না করেই বহু রেল প্রকল্প ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে বলে অধীরের দাবি। যেমন, ফুরফুরা শরিফের রেল লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করেই শিলান্যাস করেছিলেন মমতা। এখন রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া জমি সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। জমির সমস্যা না মিটলে সম্ভব নয় রেল প্রকল্পের রূপায়ণ, স্পষ্ট বক্তব্য অধীরের। তাঁর কথায়, “রেলে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
রাজনীতির কারবারিদের মতে, অধীরের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলি রূপায়ণের জন্য কেন্দ্র ‘সাধ্যমতো’ করবে বলে যে মন্তব্য করেছেন অধীর, তার মধ্যে সতর্ক ও সুচিন্তিত রাজনীতি রয়েছে বলে তাঁদের মত। কী রকম? প্রথমত, অধীর চৌধুরী পূর্ণমন্ত্রী নন। তাঁর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চাইলেই তিনি সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, রেলের আর্থিক দুর্দশা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে ভাবে ঢালাও প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, তা রূপায়ণ করা সহজ নয়। বিপুল টাকা দরকার। তৃতীয়ত, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের হাতে সময়ও রয়েছে আর মাত্র দেড় বছর। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্প রূপায়ণের জন্য সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার কথা প্রকাশ করেও অধীর কৌশলে তাঁর সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথাও জানিয়ে দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবং সেই সঙ্গে ওই সীমাবদ্ধতার দায়ভারটাও তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। কারণ অধীর-সহ কংগ্রেসের রাজ্য ও কেন্দ্রীয়, দুই স্তরের নেতারাই জানেন, পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলি নিয়ে খুব শীঘ্রই সুর চড়াতে শুরু করবেন মমতা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগই তখন তুলবেন তিনি। তৃণমূলের সেই ভবিষ্যৎ রাজনীতির মোকাবিলার প্রস্তুতি যে অধীরবাবুরাও আগাম নিয়ে রাখছেন, তাঁর কথায় সেই ইঙ্গিতই পরিষ্কার।
নতুন রেল প্রতিমন্ত্রী এ দিন তাই সুকৌশলেই বলেছেন, “রেল প্রকল্প রূপায়ণ হলে রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পশ্চিমবঙ্গের নেতা হিসেবে সে দিক থেকে আমার আগ্রহ ও সদিচ্ছার অভাব নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী, মুকুল রায়ের মতো প্রাক্তন রেলমন্ত্রীরা ভাল পরামর্শ দিলে তা-ও আমি যথাসাধ্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত।” |