রাজ্য সরকারের নির্দেশ দিয়েছে শীঘ্রই বাঁকুড়া পুরসভার অচলাবস্থা কাটাতে হবে। তাই উপপুরপ্রধানের নেতৃত্বে আস্থাভোটে পরাজিত তৃণমূলের শম্পা দরিপাকেই ফের পুরপ্রধানের দায়িত্ব দিতে চলেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বাঁকুড়ার জেলাশাসককে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়ে দ্রুত এই পুরসভার অচলাবস্থা কাটাতে নিদের্শ দেন। এরপরেই বিষয়টি সদর মহকুমাশাসককে দেখতে নির্দেশ দেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। এ দিন তিনি বলেন, “বাঁকুড়া পুরসভায় পুরপ্রধান না থাকায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকার অবিলম্বে ওই অচলাবস্থা দূর করে পুরপরিষেবা স্বাভাবিক করার নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি মহকুমাশাসককে (বাঁকুড়া সদর) দেখতে বলেছি।” মহকুমাশাসক বলেন, “বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটাভুটির পদ্ধতি ঠিক না ভুল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর তা না জানানো পর্যন্ত পুরসভার আগের পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানকেই ওই পদে কাজ করতে বলা হবে। আগামী সোমবার পুরসভায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।”
২৩টি ওয়ার্ডের এই পুরসভায় ১৩ জন কাউন্সিলর (এক জনের মৃত্যু হয়েছে) নিয়ে তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছিল। তৃণমূলের শম্পা দরিপা পুরপ্রধান ও অলকা সেন মজুমদার উপপুরপ্রধান হন। শপথগ্রহণের দিন দুই নেত্রীর মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ফাটল আরও বাড়ে। ২৩ জুন অলকাদেবী-সহ তৃণমূলের ৬ কাউন্সিলর কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। দলের জেলা নেতৃত্ব থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টা করেও অলকাদেবীদের অনাস্থা প্রত্যাহার করাতে পারেননি। ৯ জুলাই আস্থা সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে ৮টি ভোট শম্পাদেবীর পক্ষে গেলেও ১০টি তাঁর বিপক্ষে যায়। পুরপ্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করা গিয়েছে জানিয়ে ১৬ জুলাই পুরপ্রধান নির্বাচনের বৈঠক ডাকেন অলকাদেবী। কিন্তু তার আগেই আস্থা ভোটে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শম্পাদেবীর ঘনিষ্ঠ নির্দল কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ১৩ জুলাই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়, এই আস্থা ভোটের প্রক্রিয়া ঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। ততদিন পুরপ্রধান নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুরপ্রধানহীন বাঁকুড়া পুরসভায় ডামাডোল অবস্থা চলছিল। বাঁকুড়ার বাসিন্দারা তো বটেই সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে শম্পাদেবী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ৭ কাউন্সিলরের সঙ্গে অলকাদেবীর একদা ঘনিষ্ঠ ৪ কাউন্সিলর বাঁকুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে পুরসভার অচলাবস্থা কাটানোর আর্জি জানান।
অলকাদেবী বলেন, “মহকুমাশাসকের ডাকা ওই বৈঠকের চিঠি পেয়েছি। আমরা সেখানে যাব।” তাঁর দাবি, “পুরসভায় এখন মোটেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়নি। বাসিন্দারা ঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন। তবে শম্পাদেবীকে ফের পুরপ্রধানের পদে বসালে তা আইন বিরুদ্ধ কাজ হবে।” শম্পাদেবী অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “মহকুমাশাসকের ডাকা ওই বৈঠকে আমরা যাব।”
অলকাদেবীর একদা ঘনিষ্ঠ বর্তমানে শম্পাদেবীর শিবিরে থাকা এক কাউন্সিলর এ দিন বলেন, “প্রশাসন ও দল যা বলবে, তা মানব।” কিন্তু শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে আস্থা ভোটেও তো দলের সম্মতি ছিল না। তাঁর বিপক্ষে কেন ভোট দিয়েছিলেন? ওই নেতা অবশ্য জবাব দেননি। শুধু মুচকি হেসেছেন। |