পেটের দায় বড় দায়। তাই কারখানায় লক-আউট হতে চলেছে, আনন্দবাজার পত্রিকায় এই খবর দেখে বৃহস্পতিবার সাত সকালেই শ্রমিকরা কারখানায় ছুটেছিলেন। তাঁরাই মালিককে ডেকে বৈঠক করে মীমাংসা করলেন। আলাপ-আলোচনায় কেটে গেল জট।
তৃণমূলের শ্রমিক শাখা আইএনটিটিইউসি-র বর্ধিত বোনাসের দাবি নিয়ে আন্দোলনের জেরে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের দালানডাঙার ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েও দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। জামার কলারের কাপড় তৈরির কারখানা থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মাল বের করতে বাধা দেওয়া হচ্ছেও বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ডিরেক্টর অনিলকুমার পাতোদিয়া। তার জেরে বৃহস্পতিবারই কারখানার দরজায় তিনি লক-আউটের নোটিস সাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেই খবর এ দিন সকালে প্রকাশ হতেই শ্রমিকরা কারখানায় জড়ো হন। তাঁরাই ফোন করে ডেকে আনেন অনিলবাবুকে। অস্থায়ী শ্রমিক বুদ্ধদেব সিংহ, মনোহর রায় বলেন, “কারখানা বন্ধ হলে আমরা খাব কী? লক-আউট হতে চলেছে জেনে তাই আমরাই মালিককে ডেকে মত বদলাতে বলি। তিনিও বোনাস দিতে রাজি হয়ে যান। স্বস্তি ফিরে পেলাম সবাই।”
অনিলবাবু বলেন, “এ বার ব্যবসা ভাল হয়নি। তবু, আইএনটিটিইউসি ১৫ শতাংশ বোনাসের দাবিতে অনড় থাকায় কারখানা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরাই কারখানা চালু রাখার জন্য ফোন করায় মত বদলেছি। আলোচনা করে ১৪ শতাংশ বোনাস দেওয়ার পাশাপাশি বিষ্ণুপুর মেলার সময় শ্রমিকদের অতিরিক্ত কিছু টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছি।”
আইএনটিটিইউসি-র কারখানার ইউনিট সম্পাদক বিমল মল্ল বলেন, “এলাকায় বড় শিল্প নেই। মাঝারি এই কারখানাটি হওয়ায় তবু কিছু লোক কাজ পেয়েছে। বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকরা খাবে কী? বোনাস বাড়ানোর দাবি করে আসছিলাম ঠিকই। তার জন্য কারখানা বন্ধ হয়ে যাক চাইনি। কাগজে দেখে কর্মীদের নিয়ে ছুটে এসেছি। সুষ্ঠু মীমাংসায় আনন্দিত।”
এ দিন ওই কারখানা পরিদর্শনে যান বিষ্ণুপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার সুভাষ মুখোপাধ্যায়। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের আলোচনায় সমস্যার সমাধান হওয়ায় তিনিও খুশি। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, আন্দোলনের জেরে ৫ দিন ধরে আটকে রাখা মাল পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে।
সকালে সংবাদপত্র দেখে আশঙ্কায় ভোগা কারখানার ২০ জন স্থায়ী ও ৬৪ জন অস্থায়ী শ্রমিক দিনের শেষে হাসি মুখেই বাড়ি ফিরলেন। |