মুর্শিদাবাদ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিশুশ্রমিক স্কুলগুলির ৪১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা গত সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সাকুল্যে ৪ হাজার টাকা মাসিক বেতনের ওই শিক্ষকদের মাইনে থমকে যাওয়ায় তাঁরা অনেকেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন।
কিন্তু আচমকা তাঁদের এ হাল হল কেন?
কেন্দ্রীয় বিড়ি কল্যাণ দফতরের খরচে চলা ওই স্কুলগুলির যাবতীয় খরচই বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকী শিক্ষকদের মাইনেও। মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্তত ১৪০টি শিশুশ্রমিক স্কুলের পড়ুয়া কিংবা শিক্ষকেরা তাঁদের পাওনা টাকা থেকে কখনই বঞ্চিত হননি। পড়ুয়াদের প্রাপ্য মাসিক দেড়শো টাকা কিংবা শিক্ষকদের বেতন, কখনওই অনিয়মিত হয়েছে, এমন খবর নেই। কিন্তু চলতি বছরে সে প্রাপ্যই আচমকা থমকে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় তহবিলের ওই টাকা অবশ্য সরাসরি স্কুলগুলিতে নয়, আসে জেলা প্রশাসনের কাছে। তাঁরাই শিক্ষকদের প্রাপ্য সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে তিন মাস অন্তর পাঠিয়ে দেন। এ ভাবেই চলছিল।
প্রকল্পের অধিকর্তা অতিরিক্ত জেলাশাসক রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “ওই শিক্ষকেরা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। প্রতি বছর অবশ্য ওই চুক্তি নবীকরন করা হয়। তবে গত চার মাস তাঁরা স্কুলের জন্য কোনও কাজ করেননি। কাজ না করলে বেতন দেব কী করে?” জেলার এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের তহবিল থেকে চালানো হয়। শিক্ষকদের মাইনেও ওই তহবিল থেকেই হয়। শেষ তিন মাসের বেতন কেন্দ্র পাঠায়নি। আর, বর্ষ শেষে কোন ছাত্রকে নেওয়া হবে এ ব্যাপারে শিক্ষকেরাই একটা সমীক্ষা করেন। এ বার সেই সমীক্ষা করার দায়িত্ব ওঁদের দেওয়া হয়নি। তবু চার মাস ধরে সেই সমীক্ষা চালিয়ে এখন ওঁরা বেতন দাবি করছেন।” কিন্তু প্রচলিত নিয়ম ভেঙে ওই শিক্ষকদের সমীক্ষা করার দায়িত্ব থেকে বঞ্চিতই বা করল কেন প্রশাসন তার কোনও স্পষ্ট জবাব মেলেনি।
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৭ হাজার শিশুশ্রমিক পড়াশুনা করে। প্রতি তিন বছর অন্তর এপ্রিল মাসে প্রথম শ্রেণীতে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তি করানো হয়। পরের তিন বছরে বা ছত্রিশ মাসে (৯ মাসে শিক্ষা বর্ষ হিসেবে) ওই পড়ুয়ারা পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠে। স্কুলগুলিতে গ্রীষ্ম বা পুজোর ছুটি থাকে না। টানা তিন বছর ক্লাস হয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ শেষ করে দেওয়া হয়।তারপর শিক্ষকেরাই ওই শিশুশ্রমিক স্থানীয় হাইস্কুলে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন।
শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের ছেলে মেয়েরা অনেক সময়েই সাধারণ স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় না। তাদেরই মূলত এই সব স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। আগে শিক্ষাবর্ষ শেষে শিক্ষকরাই সমীক্ষা করতেন, কারা পরের তিন বছরের জন্য ভর্তি হবে তা শিক্ষকেরাই অনুমোদন করতেন। এ বার এপ্রিল থেকে অগস্ট পর্যন্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষার কাজ করায় জেলা প্রশাসন। অথচ আমাদের শিক্ষকদের যে সমীক্ষা করতে হবে না তা জানানোর সৌজন্যও দেখায়নি প্রশাসন। ফলে তাঁরা অন্যান্যবারের মতোই সমীক্ষা করেছিলেন।” তাঁদের দাবি, ওই সমীক্ষাও ভুলে ভরা। |