কাঁথি পলিটেকনিক কলেজ
লেদ কারখানায় গিয়ে প্র্যাক্টিক্যাল
প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসের জন্য ল্যাবরেটরি আছে। এমনকী ওয়ার্কশপের জন্য পৃথক ভবন আছে। কিন্তু তাতে কোনও যন্ত্রপাতি নেই। অগত্যা পড়ুয়াদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করতে যেতে হয় গ্রিল তৈরির কারখানা বা লেদ কারখানায়। এই ভাবেই চলছে কাঁথি পলিটেকনিক কলেজ। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী। পরিকাঠামোগত এই অসুবিধার মধ্যে পড়াশোনা কতটা হচ্ছে তা নিয়ে সংশয়ে পড়ুয়ারাও।
মূল ভবন।
সত্তরের দশকে কৃষিভিত্তিক কাঁথি মহকুমায় কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান এলাকাবাসী। এরপরেই কাঁথি শহরের অদূরে ব্রাহ্মণশাসন ও রঘুরামপুর মৌজায় পলিটেকনিক কলেজ স্থাপনের জন্য ২৮.১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। ১৯৭৮ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার পতন হলে পলিটেকনিক কলেজ স্থাপনের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ১৯৯০ সালে বামফ্রন্ট সরকার ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রুর্যাল টেকনোলজিএকটি মাত্র বিষয় নিয়ে কাঁথি পলিটেকনিক কলেজ চালু করে। পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালে ডি ফার্ম এবং ২০০৬ সাল থেকে ২০১০সালের মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স, কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়। সাতটি বিষয়ে পাঠ্যক্রমের জন্য বিভিন্ন পদ তৈরি করা হলেও অধিকাংশই শূন্য পড়ে রয়েছে। কয়েক বছর আগে কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী চক্রধর মেইকাপের উদ্যোগে নতুন-নতুন ভবন, হস্টেল, অডিটোরিয়াম নির্মাণ হয়। কিন্তু প্রতিটিই অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাজ্যে পালা পরিবর্তনের দেড় বছর পরও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। ইতিমধ্যেই টিএমসিপি-র ছাত্রসংসদ কলেজের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য একাধিক আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ছাত্রসংসদের বতর্মান সভাপতি সাকিম আহমেদের মতে, “প্রায় আটশো ছাত্রছাত্রীর পঠন-পাঠন নিয়ে মাথাব্যাথা নেই কারও।”
অথচ, ওয়ার্কশপ বা ল্যাবরেটরি কলেজে নেই বললে সত্যের অপলাপ হবে। বিশাল ওয়ার্কশপ ভবন রয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনও যন্ত্রপাতি নেই। মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপে ১০ জন ইনস্ট্রাক্টর থাকার কথা, রয়েছেন মাত্র দু’জন। মেকানিক্যাল বিভাগে ৮ জনের মধ্যে দু’জন থাকলেও ইলেকট্রিক্যালে এক জনও নেই। আর যন্ত্রপাতির অভাবে মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপ হিসাবে তৈরি বিশাল ভবনটি বতর্মানে কলেজের পরিত্যক্ত ও অকেজো জিনিসপত্র ফেলে রাখার জায়গায় পরিণত হয়েছে। ইনস্ট্রাক্টর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট না থাকায় মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স, কেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ল্যাবরেটরিগুলি কার্যত অচল ও অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
আস্তাকুঁড়েতে পরিণত ওয়ার্কশপ।
পর্যাপ্ত অধ্যক্ষও নেই কলেজে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দু’জন, ইলেকট্রিক্যালে পাঁচ জন, মেকানিক্যালে দু’জন, কম্পিউটার সায়েন্সে তিন জন, কেমিক্যালে চার জন, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশনে তিন জন, এগ্রিকালচারে এক জন শিক্ষক কম আছেন। কলেজে লাইব্রেরি থাকলেও তাতে পর্যাপ্ত বই নেই। দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসা ছাত্রীদের জন্য কোনও হস্টেল নেই। ছাত্রদের জন্য মাত্র ৬০ শয্যার একটি ছাত্রাবাস থাকলেও তাতে পরিকাঠামোগত অভাব সুস্পষ্ট। ২৮ একরের বেশি জায়গার উপর নির্মিত এই কলেজের নিরাপত্তার ভার মাত্র দু’জন নৈশপ্রহরীর উপর। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শোভনদেব সাহুর কথায়, “গোটা কলেজে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে নৈশপ্রহরী মিলিয়ে মোট ১২০টি পদের মধ্যে ৬৪টি পদ অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি পদ শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই পদে নিয়োগের জন্য কারিগরি শিক্ষা দফতরে আবেদন জানানো হলেও কাজ হয়নি।” গত ২৬ জুন দায়িত্ব নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “কলেজের মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে পরিকাঠমোগত উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। লাইব্রেরির জন্য ৬ লক্ষ টাকার বই কেনা হয়েছে। আরও ৩৫ লক্ষ টাকার পরিকল্পনার খসড়া কারিগরি শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.