পাঁচ উইকেট নিয়েও নিশ্চুপ যুবরাজ
ছিল ৩০২-৪। হল ৩৬৮-৭। যুবরাজ সিংহের হাতে বল না উঠলে এমনটা হত? জেমস অ্যান্ডারসন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে মনোজ তিওয়ারির হাতে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ, তখন যুবির ঝুলিতে পাঁচ-পাঁচটা শিকার। তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট জীবনে এই প্রথম। ইংরেজদের অর্ধেক ব্যাটিং লাইন আপই উপড়ে দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল করলেন তিনিই, ২৬ ওভার ৫ বল। এর পরেও যুবরাজের ফিটনেস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা সম্ভব?
প্রস্তুতি ম্যাচের শেষ দিনে যখন তাঁর হাতে বল উঠল তখন সমিত পটেলের সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে, প্রায়রের ঝুলিতেও হাফ সেঞ্চুরি। দলের অন্য বোলাররা যখন ক্রমশ হতাশ হয়ে উঠছেন, তখনই যুবরাজের হাতে বল দিলেন টেস্ট দলে ছয় নম্বরের লড়াইয়ে তাঁর প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী রায়না। এত দেরি করে বল দেওয়াটা সে জন্যই কি না কে জানে? প্রথম বলেই ম্যাট প্রায়রের ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে রায়নার হাতেই ক্যাচ। যেন নন-স্ট্রাইকার সমিতকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন। গ্রামে-গঞ্জে যেমন খবর দিয়ে ডাকাতি করতে আসে ডাকাতরা, তেমনই সমিতের উইকেটও লুটে নিলেন যুবরাজ। সেই ওভারেরই শেষ বলে। হুঁশিয়ারি পেয়েও সাবধান না হওয়ার ফল। কভারে মুরলী বিজয়ের হাতে প্রায় চামচে করে বল তুলে দিলেন সেঞ্চুরিয়ান সমিত, যিনি এখন প্রথম টেস্টে ইংরেজ ব্যাটিং অর্ডারের ছ’নম্বর জায়গার দাবিদার। ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামের এই ম্যাচে দু’দলেরই ব্যাটিং অর্ডারের ছ’নম্বরের লড়াই তীব্র হয়ে উঠল। কী অদ্ভুত মিল দু’দলের মধ্যে। যুবির এ দিনের এই দুই শিকারেই কাত ইংল্যান্ড ব্যাটিং। শেষ দিকে ব্রেসনান রুখে না দাঁড়ালে মাত্র ৫৭ রানে এগিয়ে থাকার বড়াইটা আর করতে পারতেন না জেমস অ্যান্ডারসন। এতেই বলছেন, “এই ম্যাচে আমাদের যতটা ভাল খেলার দরকার ছিল ততটাই খেলেছি।” যুবরাজের পাঁচ উইকেটকে তেমন পাত্তা না দেওয়ার সাহসও দেখালেন ওই ৫৭টা রানের লিডের জন্যই। কুকদের দলের ইনিংসও শেষ করলেন কিন্তু সেই যুবিই।
ব্রেবোর্নে যুবরাজের ঘুর্ণি। ছবি: রয়টার্স
ব্রেবোর্নে দু’টো পেপারেই সসম্মানে পাস করলেও তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কেউ কেউ সন্দিহান। ব্যাপারটা যে যুবরাজকে মানসিক ভাবে ধাক্কা দিয়েছে, তা বোঝা গেল তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ফিরে যাওয়া দেখে। ২৭ বলে ১৪ রান করার পর ব্রেসনানের বল যে ভাবে পুল করতে গিয়ে মিড অনে বেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে দিলেন, তাকে আর যাই হোক, যুবরাজকীয়সুলভ বলা যায় না। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়ও তিনি সেই প্রথম ইনিংসের যুবরাজ নন। প্রাক্তন নির্বাচক প্রধান কিরণ মোরে বলছিলেন, “যুবিকে নিয়ে এখনও কেন এত সন্দেহ, আমার মাথায় ঢুকছে না। এই পারফরম্যান্স দেখার পর তো বলতেই হবে, ও অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তা হলে প্রশ্ন কোথায়?” সত্যিই এর উত্তর কারও জানা নেই।
খেলার পর দলের কোচ লালচাঁদ রাজপুতের কাছে অনুরোধ গেল, বরং যুবরাজ আসুন সিসিআই ক্লাব হাউসে কোচবিহার রুমে, যেখানে এত দিন ধরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন দু’দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেই অনুরোধ যে রক্ষা করবেন না, তা আগেভাগে কোচকে বলে রেখেছিলেন অভিমানী যুবরাজ। যা বক্তব্য, তা তো মাঠেই ব্যাট আর বল হাতে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মা শবনম যে টিভি ক্যামেরার সামনে মুখ খুলে ফেলেছেন, সে কি আর জানতেন? সন্ধ্যায় এক সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলে শবনমও অভিমানী গলায় বললেন, “দলীপে ডাবল সেঞ্চুরি, ব্রেবোর্নে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট, টানা তিন দিন ধরে মাঠে থাকল, এ সব তো নির্বাচকেরা নিজের চোখেই দেখেছেন। তার পরেও কী করে যুবরাজের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, জানি না।” যেন ছেলের চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছেন মা। হতেই পারে। তিনিই তো যুবরাজের কঠিন লড়াইয়ের একমাত্র সাথী। যুবরাজ নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন। পারলেন না শবনম। কারণ তিনি এক বাস্তাববাদী ছেলের আবেগপ্রবণ মা। টিভি ক্যামেরায় সেই আবেগই ধরা পড়ল এ দিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ‘এ’ ৩৬৯ ও ১২৪-৪ (রাহানে ৫৪, যুবরাজ ১৪, মনোজ ২ নঃআঃ, অ্যান্ডারসন ২-২০)।
ইংল্যান্ড ৪২৬ (কুক ১১৯, সমিত ১০৪, প্রায়র ৫১, ব্রেসনান ৩৩ নঃআঃ, যুবরাজ ৫-৯৪, দিন্দা ২-৮৬)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.