রঞ্জি অভিযান শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে মনোজ তিওয়ারির বাংলা যে এমন জটিল ক্যালকুলাসের মুখে পড়বে, কে জানত?
পূর্বাঞ্চলের পরপর দু’বার দলীপ জেতা। মনোজ তিওয়ারি-অশোক দিন্দার টেস্ট টিমের চৌকাঠ পেরনোর প্রবল সম্ভাবনা। লক্ষ্মীরতন শুক্লের জীবনের সর্বপ্রথম বোর্ডের স্বীকৃতি। ওপর-ওপর চোখ বোলালে সুখী সংসারের ছবিই উঠে আসবে। যেখানে নিশ্চিন্তে তৈরি হয় স্বপ্নের বৃত্ত। রাজপুত বধের নকশা। কিন্তু সুখস্বপ্ন ছাপিয়ে বাংলা শিবিরে ঢুকে পড়েছে পিচ-বিতর্ক। দুই ওপেনারের চোট। তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের ক্লান্তি।
একে একে আসা যাক।
চলতি মরসুমের গোড়া থেকে বাংলা টিম ম্যানেজমেন্ট বলে আসছিল, স্পোর্টিং উইকেট পেলে ভাল। বাইশ গজে যদি কিছুটা ঘাস থাকে, তা হলে সুবিধা পাবে বাংলার শক্তিশালী পেস-ব্যাটারি। বুধবার সন্ধেয় যা নিয়ে একপ্রস্থ কথাও হয়ে যায় বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামন এবং পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের। কিন্তু এ দিন সকাল সকাল প্র্যাক্টিস করতে ঢুকেই বাংলা শিবির আবিষ্কার করে, পিচে ঘাস অনেকটাই ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ক্ষুব্ধ রামন চেঁচামেচি জুড়ে দেন। তড়িঘড়ি বাংলা শিবিরকে বলা হয়, ঘাস ছাঁটা নয়, ওটা ‘লেভেল’ করা হয়েছে। সকালে ইডেনে ছিলেন না প্রবীর। দুপুর বারোটা নাগাদ তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলেন, “কে বলেছে এ সব? আমি তো মাঠেই ছিলাম না। যারা এ সব বলছে, তারা আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুক।” পুরো ঘটনা নিয়ে বাংলা শিবিরে চোরা অসন্তোষ চলেছে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত। |
শুধু পিচে মিটলে রক্ষে ছিল, কিন্তু দ্রুতই তার সঙ্গে যোগ হয়ে গেল চোট-সমস্যা। এক নয়, একজোড়া। স্লিপ ক্যাচিং প্র্যাক্টিসের সময় একই সঙ্গে আঙুলে চোট পেয়ে গেলেন বাংলার দুই ওপেনার। ডান হাতের অনামিকার বারোটা বাজল পার্থসারথি ভট্টাচার্য-র। রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় চোট পেলেন বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে। সাত-তাড়াতাড়ি পার্থসারথিকে নিয়ে ছুটতে হল এক্স-রে করাতে। তিনি তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে। রোহনের চোট অত গুরুতর নয়, কিন্তু শুক্রবার সকালে তাঁর নামার সম্ভাবনা শূন্যের চেয়ে একটু বেশি। দুই ওপেনারই এক সঙ্গে চোট পেয়ে প্রায় একই সময়ে ছিটকে যাচ্ছেন, এমন ঘটনা বাংলা ক্রিকেটে হালফিলে নজিরবিহীন। সকালে আবার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি মুম্বই থেকে টিম ম্যানেজমেন্টের একজনকে ফোন করে টিমের খোঁজ নিয়েছিলেন। তখনও জানতেন না, দুই ওপেনারই মোটামুটি বাইরে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত নাটকীয় পরিস্থিতি।
যা ঠিক হয়েছে, তাতে ওপেনিংয়ে আসছেন শুভময় দাস এবং জয়জিৎ বসু। দুই ওপেনারের জায়গায় পনেরো জনের স্কোয়াডে ডাকা হয়েছে দেবব্রত দাস এবং অরিন্দম ঘোষকে। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বৃহস্পতিবার রাতে শহরে ঢুকছেন মনোজ-ঋদ্ধিমান-দিন্দা। যা নিয়ে রীতিমতো গজগজ করছেন বাংলা কোচ। রামন বলছিলেন, “এ ভাবে সূচি হলে তো মুশকিল। টানা সাত দিন ম্যাচ খেলা কখনও শুনিনি।” টিমের সিনিয়র লক্ষ্মীরতন শুক্ল আবার বারুদ ঠাসার চেষ্টা করে গেলেন। বললেন, “কয়েকজন চোট পেয়ে গেল ঠিক। কিন্তু রাজস্থান মনে রাখলে ভাল করবে যে, আমরা রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব।”
তবে লক্ষ্মীর পাল্টাও থাকছে। এমনিতে রাজস্থান নিয়ে বিশেষ রোমান্সের জায়গা নেই। টিমে তো তারকাই সে ভাবে নেই। তবে অদ্ভুত অদ্ভুত গল্প আছে। যেমন অশোক মেনারিয়া। এক সময় রাজ্য দল থেকে বাদ পড়ে ক্রিকেটটাই ছেড়ে দেবেন ঠিক করেছিলেন। প্রত্যাবর্তনের গল্প? শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত তাঁকে দেখে এতটা মুগ্ধ হয়ে যান যে, রাজস্থান রয়্যালসের প্রথম এগারোয় তাঁর জায়গা নিশ্চিত হয়ে যায়। দলের সেরা পেসার পঙ্কজ সিংহ আবার এক সময় ক্রিকেট ছেড়ে বাস্কেটবলের দিকে ঝুঁকেছিলেন। “আমাদের সবচেয়ে বড় ইউএসপি কী জানেন? আমরা ব্যক্তি নয়, সমষ্টিতে বিশ্বাস করি। সেটাই পরপর দু’বার রঞ্জি জেতার কারণ,” বলছিলেন রাজস্থান অধিনায়ক হৃষিকেশ কানিতকর।
যাবতীয় অস্বস্তি-আশঙ্কা কাটিয়ে বাংলা এখন ‘সমষ্টি’ টোটকাতেই রাজস্থানকে ঘায়েল করতে পারে কি না, সেটাই প্রশ্ন। |