ভোজনরসিক সচিন রানের রেসিপির খোঁজে
ক্রিকেটাররা এমনিতেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাঁদের মধ্যে তিনি তো আরওই বেশি করে। এ বার কি তার মাত্রা আরও বেড়ে গেল সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের?
শততম সেঞ্চুরির কাছাকাছি সময় নতুন হেয়ারস্টাইলে দেখা যায় সচিনকে। ফুলোফুলো চুল পিছনের দিকে। বন্ধুরা অনেকে বলেছিল, ডিজাইনার হেয়ারস্টাইলে মানাচ্ছে না। সচিন শোনেননি। ওই চুলের স্টাইলেই বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং করেছেন। স্টাইলটা রেখে দিয়েছেন বেশ কিছু দিন। নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ খেলেছেন। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে ভারতের মাঠে সম্ভবত তাঁর শেষ মরসুম শুরু করার আগে সচিনকে দেখা গেল অন্য চুলের ছাঁটে। পুরনো সেই ছাঁট। ফুলোফুলো ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ছেঁটে ফেলা। বন্ধুদের পর্যবেক্ষণে সেই মরাঠি হেয়ারস্টাইল যা তাঁকে অতীতে প্রচুর রান দিয়েছে।
রঞ্জি খেলতে নামছেন কাল চার বছর বাদে। এই ইভেন্টটা নিয়ে মুম্বইয়ের সাংবাদিক মহলে যা ঔৎসুক্য আর আলোচনা, ‘যব তক হ্যায় জান’ রিলিজের প্রাক্কালে শাহরুখের জন্মদিন ঘিরেও তা নেই।
প্র্যাক্টিসের সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন যথারীতি। বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেননি। কিন্তু অন্য দিনগুলো শুনলাম মুম্বই টিম আসার দু’ঘণ্টা আগে তিনি একা আসতেন। টিম আসত সকাল ন’টায়। তিনি আসতেন সকাল সাতটায়। সাতটা থেকে ন’টা ওয়াংখেড়েতে কী হত, সেটা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা গেল। প্রথমে ফিটনেস এক্সারসাইজ, তার পর পায়ের মুভমেন্ট বাড়ানোর জন্য অনুশীলন। মুম্বই টিম এলে সবার সঙ্গে ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং এবং নেটে ঢুকে যাওয়া। ফুটওয়ার্ক যেহেতু গত সিরিজে সমস্যা করেছে, তাই পায়ের মুভমেন্টের ওপর বাড়তি এক ঘণ্টা অনুশীলন।
এ দিন দেখে মনে হল, চেহারাটা বেশ ঝরিয়ে ফেলেছেন। ধোনির ভারতীয় দলে এমনিতে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। সবচেয়ে বড় ভোজনরসিকও তিনি। কিন্তু এ দিন নিজেই স্বীকার করলেন, সিজনের শুরুতে খাওয়াটা পুরো কন্ট্রোল করে ফেলেছেন। বললেন, “কখন আনন্দে পেট পুরে খেতে হবে, তার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হল কখন খেলা বুঝে খাওয়াটা কমিয়ে দিতে হবে। আর শুধু কমানোই নয়, একটা রুটিন করে খেতে হবে। এখন আমার সেই খাওয়া কমানোর ফেজ চলছে।”

বিশ্বরেকর্ড পরবর্তী অপয়া হেয়ারস্টাইল।

এ বারেরটা কি পয়া হেয়ারস্টাইল?
সচিন এ দিন একটা ব্যতিক্রমী সাংবাদিক সম্মেলন করলেন যেখানে তিনি ক্রিকেট-অবতার নন, স্রেফ খাদ্যরসিক। সেই মরাঠি ছেলেটি যিনি শুধু ক্রিকেটেরই অসীম যাত্রাপথে ঘুরপাক খাচ্ছেন না। ক্রিকেটযাত্রার সঙ্গে যাঁর জীবনে একটা খাদ্যযাত্রাও রয়েছে। নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারে মায়ের হাতের মরাঠি রান্না থেকে ওয়ার্ল্ড কুইজিনে আবাহনএই যাত্রাটাও সম্পূর্ণ করেছেন তেন্ডুলকর।
ঐতিহ্যজড়িত ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সিকে নাইডু হলে বোরিয়া মজুমদারের ‘কুকিং অন দ্য রান’ বইটার উদ্বোধন করতে এসেছিলেন সচিন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর রোমহর্ষক কিছু ইনিংসের আগে খাদ্যাভাস কেমন ছিল, সেটা ফাঁস করলেন। হদিশ দিলেন বিখ্যাত সব ইনিংসগুলোর ফাঁকে যা ফুড-রেসিপি লুকিয়ে ছিল।
’৮৯-এর পাকিস্তানে আবির্ভাব সিরিজ: সকালে কিমা পরোটা আর লস্যি। তার পর একেবারে ডিনার। মাঝে লাঞ্চ-স্ন্যাকস কিছু নয়। পাছে ওজন বেড়ে যায়।
২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাকগ্রাকে প্রচণ্ড মারা: খেলার আগে ইটালিয়ান সিরিয়ালস খেয়ে নেমেছিলাম। ওই সিরিয়ালটা খেলে শরীর খুব ঝরঝরে থাকে।
২০০৩ বিশ্বকাপ, সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তান ম্যাচ: ব্যাট করতে যাওয়ার আগে এক বাটি আইসক্রিম। আর কানে ইয়ারফোন রেখে বহির্জগত থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন করে রাখা।
মোহালি, ২০১১ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল: প্যান ফ্রায়েড নুডলস।
আমদাবাদে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তিনি দিনকয়েক নিরামিষাশী হয়ে গিয়েছিলেন, সেটাও বললেন। বললেন, “কখনও সময় আসে যখন চাপ থাকলে আর মশলাদার খাবার খেয়ে এলে সিস্টেমটাকে পরিষ্কার করে নিতে হয়। প্লাস আমদাবাদে প্রচণ্ড গরম ছিল সেই সময়। তখন আমি স্রেফ দই ভাত আর অনর্গল ডাবের জলে চলে গিয়েছিলাম। সিস্টেমটাকে পরিষ্কার করা ভীষণ প্রয়োজন ছিল।”
সচিন এমনিতে অসম্ভব ভোজনরসিক। রান্না করতেও ভালবাসেন। রান্না পৃথিবীতে তাঁর এমন একটা জগৎ, যেখানে তাঁর ব্যাটিংয়ের মতো এক নম্বর হওয়ার দায় নেই। শুধু বন্ধুবান্ধবদের খাইয়ে তাদের তৃপ্তিভরা মুখ দেখা ছাড়া। বলছিলেন, “অর্জুন টিভিতে ওই মাস্টারশেফ অনুষ্ঠানটা খুব মন দিয়ে দেখে। সব শেফদের মধ্যে কম্পিটিশন চলছে। আমার সে সব প্রবলেম নেই। আমার এই জগতে কোনও কম্পিটিশন নেই। আমি ভালবাসি নিজে রান্না করে খাওয়াতে। অজয় জাডেজার দিল্লির বাড়িতে পুরো টিমকে আমি বেগুন ভর্তা রান্না করে খাইয়েছিলাম। এই রেকর্ড কারও নেই (হাসি)।”
এই সচিন দীর্ঘ দিন রান-খরার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মীরপুরের ১৬ই মার্চের পর থেকে শুধুই হতাশা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও চারটে ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৭। গড় ১১.৭৫। সবচেয়ে বেশি রান ২২। এই তেন্ডুলকরকে দেখে মনে হল ক্রিকেটজীবনের প্রান্তে এসে আবার যেন মরসুম শুরু করছেন টিন-এজারের উৎসাহ নিয়ে। টেস্ট ম্যাচ চলছে, ব্যাটসম্যান ৫১ ব্যাটিং, পরের দিন আবার ব্যাট করতে নামবে। সেই অবস্থায় কী খাওয়া উচিত, সেটাও বলে দিলেন তেন্ডুলকর। “মাঠ থেকে ফিরে প্রথমে কার্বোহাইড্রেট ডায়েট খেতে হবে। তার পর কিছুক্ষণ বাদে এমন খাবার যাতে প্রোটিন রয়েছে। রাত্তিরেও হালকা খাবার, কারণ পরের দিন আবার ব্যাট করতে হবে।”
নিজে ইথিওপিয়ান থেকে জাপানিজ সমস্ত রেস্তোরাঁ ঘোরেন, নিজে শটে যত রকম বৈচিত্র যোগ করেছেন, সে রকমই বৈচিত্র ভরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খেতে যান। জানালেন, এই যে বিভিন্ন খাবার চেখে দেখার জন্য তাঁর মতো অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মন আছে টিমে তিন জনের। যুবরাজ, জাহির আর আগরকর। অথচ ক্রিকেট মরসুম চলে এলে সেই সচিনও ভীষণ সতর্ক। সিসিআইয়ের এই সচিনকে দেখে মনে হল তিনি ইথিওপিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজ কোনও কিছুতেই আকর্ষিত নন। বোরিয়ার বইয়ের শিরোনাম যদি ‘কুকিং অন দ্য রান’ হয়, তাঁর মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে ‘ক্রিকেট কেরিয়ার অন দ্য রান’। রান্না করবেন কী, নিজেই একটা ফুটন্ত কড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন।
সিকে নাইডু হলের সরু পরিসর ঠেলে এগনোর সময় এক উৎসাহী বললেন, একশো-এক নম্বর সেঞ্চুরিটা শিগগিরই আসছে। সাধারণত ভিড় থেকে আসা কথাবার্তা নিয়ে তেন্ডুলকর প্রতিক্রিয়া দেন না। ছেড়ে দেন অফস্টাম্পের বাইরের বলের মতো। এই তেন্ডুলকর পিছনে ফিরলেন, হাসলেন, বললেন, “সবই ওপরওলা!” মনে হল মন্তব্যটা থেকেও আত্মবিশ্বাসের রেসিপি পেলেন। যে মশলাটা এই মুহূর্তে তাঁর ক্রিকেটসংসারে কম।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.