নয়া দায়িত্ব নিয়ে ওপার বাংলায়
ক্ষোভে, অভিমানে বাংলা ছাড়লেন রণদেব
পার বাংলা হালফিলে তাঁকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল না। দীর্ঘ তেরো বছর ধরে বাংলা জার্সির সম্মানরক্ষা করেও ইদানীং কপালে জোটেনি যোগ্য সম্মান।
সুব্রত গুহকে উইকেটসংখ্যায় (সুব্রত-র ২৯৯, তাঁর উইকেট ৩১৭) পেরিয়েছেন। বাংলার সর্বকালের সেরা পেসার তিনি কি না, তা নিয়ে তর্ক চলে। কিন্তু বাংলার পনেরো জনে দূরে থাক, প্রাথমিক দলেও এখন তাঁকে ভাবা হয় না।
মাঝে একটা মরসুম শুধু খারাপ কেটেছে। আর তাতেই বাংলা ক্রিকেটে তিনি ‘অতীত’। ‘বর্তমান’ নন।
রণদেব বসু তাই বাংলা ছাড়ছেন। ছাড়ছেন ক্ষোভ, অভিমান আর অসহ্য যন্ত্রনায় ডুবে। এপার বাংলা থেকে যা পাননি, তাই যেন পুষিয়ে দিচ্ছে ওপার বাংলা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির বোলিং কোচ হয়ে যাচ্ছেন রণ। থাকছেন জুনিয়র দলের দায়িত্বে।
ভিসা পাওয়াটা শুধু যা বাকি। সব ঠিকঠাক চললে, দিনতিনেকের মধ্যে বাংলাদেশ চলে যাবেন রণদেব। চুক্তির মেয়াদ আপাতত এক বছরের। ভাল করলে যা বাড়তেও পারে। অর্থাৎ, এ বারের পুরো মরসুমটা রণদেব বাংলায় নেই। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলার ইচ্ছেতেও ইস্তফা দিতে হচ্ছে।
কিন্তু বাংলা ছাড়ছেন কেন?
গলা দিয়ে অভিমানের বাষ্প ঠেলে বেরোতে চাইছে। তবু সামলে নিচ্ছেন। “কারও বিরুদ্ধাচারণ করতে চাই না। কিন্তু এটাও ঠিক, যে সম্মান আমার পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পাইনি,” বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ বোর্ডের চুক্তিপত্র হাতে বলছিলেন রণ। অভিমান ঠিক কতটা? একটু বিশদে গেলে বোঝা যাবে। “গত বছর রঞ্জির শেষ ম্যাচের আগে আমাকে জানানোই হল না, খেলব কি খেলব না। পরে শুনলাম, সামি আহমেদ ফিট না হলে খেলব। সে দিনই ঠিক করে ফেলি, আর নয়। কারও পরিবর্ত হিসেবে খেলতে হবে, এতটা দুর্দিন আমার আসেনি।”
নিজের বাড়িতে বাংলাদেশ বোর্ডের চুক্তিপত্র হাতে। ছবি: উৎপল সরকার
তবু ঠিক করেছিলেন, এক বার চেষ্টা করে দেখবেন। ইস্টবেঙ্গলে সই করেছিলেন মন দিয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলবেন বলে। যাতে বাংলা দলে প্রত্যাবর্তন ঘটানো যায়। কিন্তু সেই স্বপ্নে তালাচাবি ঝুলতে বেশি দিন লাগেনি। “ভেবেছিলাম, সব ভুলে কামব্যাক করব। তাই ইস্টবেঙ্গলে সই করি। কিন্তু যখন দেখলাম গত চার-পাঁচ বছর ধরে বাংলা টিমের আশেপাশে না থাকা এক ক্রিকেটারকে নির্বাচকরা ডাকল, আমাকে নয়, তখনই টের পেলাম ও সব প্রত্যাবর্তন স্বপ্নই থাকবে। আমাকে ওরা আর ডাকবে না,’’ বলতে-বলতে একটু চুপ। তার পর যেন ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “সত্যি বলতে এই মুহূর্তে বাংলা ক্রিকেট থেকে আমার পাওয়ার কিছু নেই। কিছু দেওয়ার আছে বলেও বোধহয় কেউ মনে করে না। তার চেয়ে যা পেলাম, সেটা অনেক বড় সম্মান। একটা জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত থাকব। এখানে সময় নষ্ট করার মানে ছিল না।” নির্বাচকদের মতো সিএবি-র উপরমহলের কর্তারাও মনে করেছিলেন, রণ বাংলাকে অনেক দিয়েছেন। কিন্তু এখন সামনে তাকানোর সময়।
আর ইস্টবেঙ্গল? চুক্তিভঙ্গের দায়ে পড়তে হবে না? “না, না। সারা বছর আমি বাংলাদেশে থাকছি না। মাঝে মাঝে কলকাতায় আসব। তখন ইস্টবেঙ্গল চাইলে ওদের হয়ে খেলব,” বলে দিচ্ছেন বাংলা পেসার। ইস্টবেঙ্গলও যে তাঁর বাংলাদেশ-যাত্রা নিয়ে অসূয়াতে ভুগছে এমন নয়। বরং ক্লাবের ক্রিকেট সচিব সদানন্দ মুখোপাধ্যায় বলে দিলেন, “এক বার জাতীয় লিগ খেলার সময় পল্টুদা (দাস) ভাইচুংকে ইংল্যান্ডের ক্লাবে ট্রায়ালে পাঠিয়েছিলেন। আমরা খেলোয়াড়দের স্বার্থ আগে দেখি। রণদেব এত বড় সুযোগ পাচ্ছে। কেন আটকাব?”
রণদেব নিজেও ঠিক করে রেখেছেন, আর কোনও অনুরোধ-উপরোধে কান দেবেন না। বছর দু’য়েক আগে তাঁর মহারাষ্ট্রে যাওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু সে বার সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বুঝিয়ে রেখে দিয়েছিলেন তাঁকে। “টাকার কথা ভেবে কোনও দিন খেলিনি। সে রকম হলে বাংলা যে বার প্লেটে নেমে গেল, সে বারই আমি অন্য জায়গায় চলে যেতে পারতাম। কিন্তু বছরখানেকের মধ্যে সব পাল্টে গেল। সিএবিতে যাদের বড় দাদা হিসেবে জানতাম, তারাও কেউ খোঁজ নিল না। এক বার কেউ বলল না পর্যন্ত, রণ তোমাকে এ বার রাখতে পারছি না। তুমি কী ভাবে সাহায্য করতে চাও বাংলাকে? মনোজদের টিমটা ভাল। ওরা রঞ্জি জিততে পারে। ওদের যদি সাহায্য করতে ডাকত, আমি কি যেতাম না?” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন রণ।
তা হলে আপনি প্রতিবাদের ছবি? “নাহ। আসলে তেরো বছর ধরে বাংলার হয়ে খেলার পর এতটা অপমান জুটবে, ভাবিনি। আর আমার সঙ্গে যা হয়েছে, সৌরাশিস-অরিন্দমের সঙ্গেও হয়েছে। তফাত একটাই। আমি একটা গর্বের মিনার খুঁজে পেয়েছি। একটা কথা ভেবেই শুধু চিন্তা হয়। সিনিয়রদের সঙ্গে যদি এ জিনিস হয়, জুনিয়রদের সঙ্গে তা হলে কী হবে?”

রণদেবের নতুন জীবন
সামনের এক বছরের ঠিকানা: বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। মীরপুর স্টেডিয়াম, ঢাকা।
দায়িত্ব: অ্যাকাডেমির বোলিং কোচ। থাকবেন বাংলাদেশের জুনিয়র জাতীয় দলের দায়িত্বেও।
চুক্তি: এক বছরের।
বাংলাদেশের আগের স্টেশন: তাঁর অভিনীত প্রথম বাংলা সিনেমা ‘তিন কন্যা’-র প্রিমিয়ার শো।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.