ভগ্নপ্রায় মসজিদ রক্ষা করছেন বৃদ্ধ রামানন্দ
সজিদের সামনের চাতালে ধান শুকোতে দিতে গিয়ে সুপ্রাচীন এক পুরাকীর্তিকে নতুন করেই যেন প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন গ্রামেরই ছেলে রামানন্দ প্রামাণিক।
ঘন জঙ্গলে ঘেরা, ভেঙে পড়া, কয়েকশো বছরের প্রাচীন ওই মসজিদটির খবর রাখতেন অনেকেই। কিন্তু সহজে যেতে চাইতেন না ওই জনশূন্য স্থানে। রামানন্দের মনে হয়েছিল, মসজিদের সামনের জঙ্গলটা কাটলে ওখানে সবাই যেতে পারবেন, সুনসান জায়গাটা লোকজনে ভরে উঠবে। এই আশায় বুক বেঁধে শুরু করলেন তাঁর সংগ্রাম। আস্তে আস্তে জঙ্গল কাটার ‘নেশা’ তাকে পেয়ে বসল। সেই নেশাই বাঁচিয়ে দিল ‘ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিকে।’
শুধু তাই নয়, ওই মসজিদটি ঘিরে এলাকায় সম্প্রীতির পরিবেশও তৈরি হয়েছে। রামানন্দবাবু বললেন, “প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকই আসেন। তাতে যে ৫-১০ টাকা ওঠে তাতে ধূপ দেশলাইয়ের পয়সা উঠে যায়।” রোজ তিনি নিজেই মসজিদে ধূপ জ্বালান। রামানন্দবাবু মসজিদের গায়ে ছোট একটা প্রণামী বাক্স রেখেছেন। তাতে যা পড়ে, তা থেকে ওই খরচটুকু উঠে আসে।
—নিজস্ব চিত্র।
প্রাচীন এই স্থাপত্যটি রয়েছে আরামবাগ মহকুমার থেকে ১০ কিমি পশ্চিমে গোঘাটের বর্ধিষ্ণু গ্রামে বাজুয়ায়। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা দেখব, বাংলার শাসন-কর্তা তখন হোসেন শাহের পুত্র নাসিরুদ্দিন নুসরৎ শাহ। তাঁরা চৈতন্যের সমসাময়িক। নুসরৎ শাহের রাজত্বকালের আনুমানিক ১৫৩১ সাল থেকে ১৫৩২ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন এই মসজিদ। সরকারি তথ্যে তা ‘জামি মসজিদ’ নামে পরিচিত। ‘খাতায়-কলমে’ ৮০-র দশকের গোড়ায় এই মসজিদটি অধিগ্রহণ করে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। মসজিদের গায়ে সন-তারিখ ছাড়া সরকারি ফলকের প্রায় মলিন হয়ে যাওয়া বিজ্ঞপ্তিতে লেখা, এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিকে পুরাবস্তু সংরক্ষণ এবং প্রত্নক্ষেত্র খনন আইন ১৯৫৭-এর ৩ ধারায়(১)অনুসারে রাজ্যের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পুরাতত্ত্ব দফতর সূত্রে জানা যায়, সে আমলে এই রাস্তাটি ছিল সামরিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সৈন্যদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সে কারণেই গোটা এলাকাটি ছিল প্রাণবন্ত। তবে সে সবই এতদিন ছিল ‘পাথুরে গল্প’। কারণ, স্থানীয় মানুষের অভিযোগ দু’টি মাত্র পিলারের ঠেকনা দেওয়া ছাড়া আর কোনও কিছুই হয়নি। কিন্তু এগিয়ে এলেন রামানন্দবাবু। গত ১৮ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এই মসজিদের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চলেছেন এই ৬৯ বছরের ওই বৃদ্ধ। পেশায় দিনমজুর। সংসারে অভাব-অনটনের অন্ত নেই। লোকের বাড়িতে তিন বাপ-বেটায় ‘দিনমজুরি’ করেও এগিয়ে এসেছেন মসজিদ উদ্ধারে। মদিনা গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ শেখ ফজলুল বলেন, “শুধু রামানন্দের চেষ্টাতেই মসজিদ একটু একটু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আজ আমরা ইচ্ছে হলেই ওখানে যেতে পারি।” রামানন্দাববু বলেন, “ভাবলাম মসজিদটা একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে সবাই আসবে, তাই লেগে পড়লাম। তা ছাড়া পুরানো দিনের মন্দির-মসজিদ বাঁচানো তো আমাদের কর্তব্য। তবে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।” রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “ওই মসজিদটি সংস্কারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.