নীলমের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে উধাও শীতের আমেজ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তামিলনাড়ু উপকূলের মামল্লপুরমে আঘাত করে দুর্বল হয়ে গেলেও নীলমের পরোক্ষ প্রভাব কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে পড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গে হুহু করে ঢুকে পড়েছে মেঘ। তার ফলে বাড়তে শুরু করেছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শীত শীত ভাবটা উধাও। উত্তুরে হাওয়ার জায়গা নিয়েছে দক্ষিণ থেকে আসা হাল্কা হাওয়া।
বুধবার বিকেলের পরে নীলম তামিলনাড়ু উপকূলের মামল্লপুরম দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড় বৃহস্পতিবার বিকেলেই অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু তার জেরে দক্ষিণবঙ্গে এত মেঘ ঢুকে পড়ল কী ভাবে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ঘূর্ণিঝড় নীলম দুর্বল হয়ে গেলেও সে রেখে গিয়েছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। সেই অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল পর্যন্ত। তার জেরে মেঘ ঢুকছে পরিমণ্ডলে। আর মেঘের জন্যই বাধা পেয়েছে উত্তুরে হাওয়া।
বেড়েছে তাপমাত্রা।
ওই নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে শনিবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া মেঘলা থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তার জেরে শনিবার দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টি পর্যন্ত হতে পারে। নিম্নচাপ অক্ষরেখা সরে গেলে ফের আকাশ পরিষ্কার হবে
এবং উত্তর ভারতের ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকবে দক্ষিণবঙ্গে। কমবে তাপমাত্রা। ফের অনুভূত হবে শীত। তবে কবে নাগাদ নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাব কাটবে সে ব্যাপারে এখনই কোনও পূর্বাভাস দিতে নারাজ আলিপুর আবহাওয়া দফতর। |
|
বৃথা সাজগোজ। নীলমের জেরে ভেস্তে গিয়েছে অনুষ্ঠান।
বিষণ্ণ মুখে ফিরছে খুদে। কর্নাটকের চিকমাগালুরে। ছবি: পি টি আই |
ঠিক কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে ওই নীলম? দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ওই ঘূর্ণিঝড়। গত কাল মামল্লপুরমে নিজের দাপট দেখানোর পর আজ সে অনেকটাই শান্ত। তামিলনাড়ুর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে এখন সে রায়লসীমা ও কর্নাটকের অভ্যন্তর ভাগে অবস্থিত। তবে প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে এই এলাকাগুলিতে। ধীরে ধীরে তার শক্তি আরও কমবে। কমবে দুর্যোগও।
তবে ইতিমধ্যে নীলম যা দাপট দেখিয়েছে, তাতে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘড়ছাড়া। এখনও পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। গত কালই প্রবল ঝড় ও ঢেউয়ের তোড়ে বেসান্তনগর এলাকার কাছে ইলিয়ট বিচ-এ এসে আটকে গিয়েছিল তৈলবাহী জাহাজ ‘প্রতিভা কাবেরী’। জাহাজে ৩৭ জন কর্মী ছিলেন।
এদের মধ্যে ২২ জন একটি লাইফ বোটে করে তীরের দিকে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ায় উল্টে যায় তাঁদের নৌকা। ডুবে মারা যান এক জন। নিখোঁজ ৬। তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার। লাইফবোটের বাকি ১৫ জন এবং জাহাজে আটকে থাকা ১৫ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। দেওয়াল ধসে পড়ায় ভিলুপুরমে মারা গিয়েছেন এক জন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান আরও এক জন। সমুদ্রের চেহারা দেখতে গিয়ে পুদুচেরিতে ভেসে যান ৪৬ বছরের এক ব্যক্তি। এখনও তাঁর দেহ মেলেনি।
বুধবারও কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগেও ঝড় বয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে নীলমের শক্তি কমে যাওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির প্রকোপও কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী পাঁচটি জেলায় এখনও কড়া সতর্কতা জারি রয়েছে। নেল্লোর জেলার বহু নিচু জমি জলের তলায়। উপড়ে গিয়েছে একশোরও বেশি গাছ। সেই গাছ পড়ে বিদ্যুৎ-টেলিফোনের তারও ছিঁড়েছে কিছু এলাকায়। কড়া নজর রাখা হয়েছে কালপক্কমের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। |
|