|
|
|
|
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী বিহার |
স্বপন সরকার • পটনা |
পশ্চিমবঙ্গ সুযোগ হেলায় হারিয়েছে। কিন্তু আগামী দিনের কথা ভেবে সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছে বিহার। ভবিষ্যতের জন্য পরমাণু বিদ্যুতের কথা ভাবতে শুরু করেছে বিহার।
বিহারের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির হাল ফেরাতে এবং আগামী দিনের জ্বালানী সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার এ বার কাটিহারে এই প্রকল্প তৈরির জন্য জাতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ নিগমকে প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে কয়লা ব্লকের জন্য দাবি জানিয়ে এলেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে এখনও সাড়া দেয়নি। ফলে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিহারের কাছে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য রাখতে এ বার সরকার নতুন করে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
কয়েক বছর আগে সরকারের এই প্রয়াসে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জলের জোগান। নওয়াদার রাজৌলিতে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েও শেষে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়ে নিগমকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি সরকার। ফলে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তাই এ বার এই প্রকল্পের জন্য সব দিক ভেবেই নতুন করে জায়গা বাছাই করেছে নীতীশ সরকার। কাটিহারের কুরসৈলে এই প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরমাণু বিদ্যুৎ নিগমের কাছে। এই ব্যাপারে বিহার বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান পি কে রাই বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য যথেষ্ট জলের প্রয়োজন। সম্প্রতি কাটিহারে উপযুক্ত জায়গা পাওয়া গিয়েছে। আমরা সেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”
সাধারণ ভাবে, জলের জোগান মেটাতে উপকূলবর্তী এলাকাতেই তৈরি করা হয় পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প। সেই কারণে হরিপুর কার্যত খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওড়িশা এই প্রকল্প পেতে ঝাঁপিয়েছে। যদিও ওড়িশার ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সরকার এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এরই মধ্যে, সমুদ্র থেকে বহু দূরে অবস্থিত বিহারও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে দরবার শুরু করেছে।
কুরসৈল-এ যে জায়গাটিকে বিহার সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করেছে, সেখানেই কোশী এসে মিশছে গঙ্গায়। বিহারের দুঃখ কোশী। কোশীর বন্যায় ভেসে যায় উত্তর বিহার। আগে কোশী খগারিয়ার কাছে গঙ্গায় মিশত। কয়েক বছর আগে নদীখাত পরিবর্তন করে যে নতুন খাতে কোশী বইতে শুরু করেছে তা কুরসৈলের কাছেই গঙ্গায় মিশছে। কার্যত কোশীকে বাগে এনেই প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলের সংস্থান করতে চাইছে বিহার। উল্লেখ্য, বিহার যে প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছে তার জন্য ৩২০ কিউসেক জল দরকার। বিহার সরকারের এক সূত্রের বক্তব্য, কোশীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে প্রয়োজনীয় জলের অভাব হবে না। পর্ষদ কর্তাদের প্রস্তাবে, ধাপে ধাপে এই প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেন, “বিষয়টি নতুন করে বিবেচনার জন্য আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ নিগমের কাছে এই নয়া প্রস্তাবটি ইতিমধ্যেই পেশ করেছি।” অক্টোবরে দিল্লিতে বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। সেখানে আরও একবার বিহার সরকারের পক্ষ থেকে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দাবি জানানো হয়। রাই বলেন, “এটি তৈরি হলে পূর্ব ভারতে প্রথম একটি পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হবে।”
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে আগ্রহী ছিল পরমাণু বিদ্যুৎ নিগম। আগ্রহী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্বয়ং। কিন্তু প্রথমে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার, পরে বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের পরমাণু বিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রীয় উদ্যোগটি ধাক্কা খায়। পরে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে এসে তা সরাসরিই খারিজ করে দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কোথাওই পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে তাঁরা দেবেন না। |
|
|
|
|
|