পদার্থ বিজ্ঞানে তো ব্যাখ্যা ছিলই। রিডলে স্কটের কল্পবিজ্ঞান ছবি ‘এলিয়েন’-এই প্রথম দেখা গিয়েছিল মহাকাশে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন নায়ক। অথচ সামনের লোকের কানে তার কণামাত্রও পৌঁছচ্ছে না।
বিজ্ঞান বলছে এটাই ঠিক। কারণ, আলোর তরঙ্গ কোনও মাধ্যম (বায়ু, জল ইত্যাদি) ছাড়াই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। কিন্তু শব্দের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। কোনও মাধ্যম ছাড়া যে শব্দ তরঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেই পারে না।
কিন্তু বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করার স্বভাব যাবে কোথায়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী এই চিরাচরিত তত্ত্ব মানছেন না। উল্টে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, আজ পর্যন্ত কেউ মহাকাশে গিয়ে চিৎকার করে দেখেছেন কি, আদৌ শব্দ শোনা যায় কি না?
সঙ্গত প্রশ্ন বটে। কারণ মহাকাশ বা ব্রহ্মাণ্ড তো পুরোপুরি শূন্যস্থান নয়। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নক্ষত্রপুঞ্জ, উল্কা, ধূমকেতু, আরও কত অজানা বস্তু। আজ পর্যন্ত তারই হিসেব করে উঠতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাই শুধু প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত থাকেননি কেমব্রিজের ‘স্পেস ফ্লাইট সোসাইটির’ বিজ্ঞানীরা। উত্তর খুঁজতে রীতিমতো মাঠে নেমে পড়েছেন তাঁরা। আর সে কারণেই তার জন্য শরণাপন্ন হয়েছেন সাধারণ মানুষের। যত জোরে সম্ভব চিৎকার করে সেই ভিডিও ইউটিউবে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
এর পর সেই ভিডিও থেকে বেছে নেওয়া হবে সবচেয়ে জোরালো দশটি চিৎকার। সেগুলি একটি অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পৃথিবীর কক্ষপথে। সেখানে ওই ফোনটিতে চালানো হবে ওই ভিডিওগুলি। একই সঙ্গে রেকর্ড করা হবে তার পর ঠিক কী কী ঘটল।
রেডিও মারফত সেই সব প্রতিক্রিয়া পাঠানো হবে পৃথিবীর গবেষণাগারে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের কাছে। গবেষণা করে তার পরে ফলাফল ঘোষণা করবেন তাঁরা। পুরো কাজটা করবে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। নাম স্ট্র্যান্ড-১। সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি এই কৃত্রিম উপগ্রহটি তৈরি স্মার্টফোন প্রযুক্তি দিয়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্ট্র্যান্ড-১ তৈরি করে একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানও অধিকার করেছিল এই বিজ্ঞানী দলটি। এর অন্যতম সদস্য এডওয়ার্ড কানিংহ্যাম বললেন, “যে চারটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন এই কৃত্রিম উপগ্রহটিতে থাকছে, তারই একটি হল ‘স্ক্রিম ইন স্পেস’ বা ‘মহাকাশে চিৎকার’ নামের এই অ্যাপ্লিকেশনটি। সেটিই পরীক্ষা করবে মহাকাশে চিৎকার শোনা যাবে কি না।”
আর ছ’ দিনের মধ্যেই প্রথম বার মহাকাশে পাড়ি দেবে স্ট্র্যান্ড-১। এই কাজে কৃত্রিম উপগ্রহটি কতটা সফল হবে তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তবে তাতে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই বিজ্ঞানী দলটির।
তাঁদের আশা, ফলাফল যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের প্রকল্প মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ অনেকটাই বাড়িয়ে তুলবে। তবে পরীক্ষাটি সফল হলে মিথ্যে হয়ে যাবে একটি প্রবাদ। জানা যাবে পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে মহাকাশের অনেকটা অংশ জুড়েই মহাশূন্য। তাই তো সেখানে গগনভেদী চিৎকারও মর্মস্পর্শী হতে পারে না! |