লাল গ্রহের সঙ্গে আমাদের পৃথিবীর যে বেশ কিছু মিল রয়েছে, আগেও তা ধরা পড়েছিল কৌতূহলী-ক্যামেরায়। প্রাচীন নদীপথ থেকে শুরু করে জলের অস্তিত্বের জোরালো প্রমাণ, বহু কিছুই ধরা পড়েছিল ‘কিউরিওসিটি’-র সন্ধানী চোখে। এ বার সে দিকেই আরও পাল্লা ভারী করল নাসার মঙ্গলযান। ‘গেল’ গহ্বরের লালপাথরে এমন রসদ খুঁজে পেল ‘মিস কৌতূহল’, যা রয়েছে আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপেও। আর তা নিয়েই রীতিমতো উত্তেজিত নাসা।
নাসা জানিয়েছে, ‘গেল’ গহ্বরের মাটি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলের পাথরকণার সঙ্গে হাওয়াই দ্বীপের ব্যাসল্ট পাথরের (আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথর) প্রচুর মিল। তা থেকেই এই দুই গ্রহের পারস্পরিক সম্পর্কের নতুন দিক খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা। আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসার বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ জানান, দুই গ্রহের মাটির উপাদানে যে বেশ অনেকটাই মিল রয়েছে, বছর পনেরো আগে ‘পাথফাইন্ডার’-এর মঙ্গল অভিযানের সময়ও তা আঁচ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তখন তেমন জোরদার প্রমাণ মেলেনি। এ বার ‘কিউরিওসিটি’ সেই প্রমাণটাই তুলে দিল বিজ্ঞানীদের হাতে। তবে, কোন আগ্নেয়গিরি থেকে হয়েছে মঙ্গলের আগ্নেয়শিলা, তা এখনও জানা যায়নি।
|
গত অগস্ট মাসে মঙ্গলে নামার পর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাঠিয়ে চলেছে ‘কৌতূহল’। কখনও মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি, কখনও বা লাল গ্রহের প্রাচীন নদীখাত। এ বার সেই তালিকায় সংযোজিত হল আরও একটি নতুন তথ্য। অগস্টেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে ছবি পাঠানোর কাজ শেষ হলে লালগ্রহের মাটি বিশ্লেষণ শুরু করবে সে। পুরনো সেই সময়সূচি মেনেই অক্টোবরের মাঝামাঝি ‘গেল’ গহ্বরে ঘোরাফেরা করার সময়ে এক খাবলা মাটি তুলে নেয় ‘কিউরিওসিটি’। তার পর নিজের দেহের ‘কেমিক্যাল অ্যান্ড মিনারেলজি ইন্সট্রুমেন্ট’-এ (কেমিন) শুরু করে তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ। নাসা জানিয়েছে, ওই নমুনাতেই মিলেছে হাওয়াই দ্বীপের পাথরের সঙ্গে সাদৃশ্য।
অমিতাভবাবু জানিয়েছেন, হাওয়াইয়ের পাথরের সঙ্গে মঙ্গলের উপাদানগত মিল থাকার অর্থ, হাওয়াইয়ের মতোই মঙ্গলের ব্যাসল্ট পাথরেও ফেল্ডসপার, পাইরক্সিন এবং অলিভিন নামে খনিজ পদার্থ রয়েছে। তবে হাওয়াইয়ে পাথরের যে আকার, তা কিন্তু মঙ্গলে নেই। নাসার এই বাঙালি বিজ্ঞানীর কথায়, “মঙ্গলে যে ধুলোর ঝড় ওঠে, তাতেই ওই পাথরগুলি ভেঙে-গুঁড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে গ্রহ-পৃষ্ঠে।” নাসার অনুমান, গোটা গ্রহের প্রায় অর্ধেকটাই ঢেকে রয়েছে এই ধরনের পাথরের গুঁড়োয়।
ভূতত্ত্ববিদেরা বলছেন, আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরনোর পর ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে তা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে জমে যায়। তৈরি হয় ব্যাসল্ট পাথর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একই উপাদানে তৈরি পদার্থ আবহাওয়ার (উষ্ণতা, বায়ুচাপ প্রভৃতি) তারতম্যের সঙ্গে বদলে যায়। যেমন, হিরে ও গ্রাফাইট, দু’টিই কার্বন দিয়ে তৈরি। কিন্তু উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্যের ফলে সেগুলি আলাদা আলাদা দেখতে হয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই পাথর এবং খনিজের গঠন বিশ্লেষণ করে মঙ্গলের আবহাওয়া সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রাথমিক বিশ্লেষণে, হাওয়াইয়ের পাথরের সঙ্গে লাল গ্রহের মিল রয়েছে। কিন্তু সেই প্রমাণকে জোরালো করতে চাই আরও জোরদার তত্ত্ব।
আপাতত তারই খোঁজে নাসা।
|