নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। দেওয়ালের ফাটল থেকে বেরিয়ে আসে পোকা-মাকড়! এ দৃশ্য কোনও ভুতুড়ে বাড়ির নয়, এটিই হল ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ঢেকা পঞ্চায়েতের রাজস্ব পরিদর্শকের দফতরের।
বছর কুড়ি আগে এলাকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ঢেকাতে রাজস্ব পরিদর্শকের দফতর খোলা হয়। ময়ূরেশ্বর (২) পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে লোকপাড়া গ্রামীণ গ্রন্থাগারের পিছনে একটি খাস জমিতে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ২ কক্ষের এই বাড়িটি। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই বাড়িটির এখন এই অবস্থা। দফতরের পিওন দিলীপ দাস বলেন, “বৃষ্টি নামলে ছাদ চুঁইয়ে এত জল পড়ে যে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র কোথায় রাখব ভেবে পাই না। ঘরে পোকামাকড়ের ভয়ে টেবিলের উপর পা তুলে বসে থাকতে হয়।”
বাড়ির দুরবস্থা তো রয়েছেই, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কর্মীর অভাব। এই দফতরের জন্য একজন করে রাজস্ব পরিদর্শক, ভূমি সহায়ক, পিওন-সহ ৫ জন কর্মী থাকার কথা। বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ৬ মাস আগেই অবসর নিয়েছেন রাজস্ব পরিদর্শক বঙ্কিম মণ্ডল। তাঁর জায়গায় এখনও কোনও স্থায়ী পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়নি। |
ময়ূরেশ্বরে জীর্ণ সরকারি অফিসের ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি। |
কলেশ্বরের পরিদর্শক আফজল হোসেনকে দিয়ে সপ্তাহে ২ দিন কাজ চালানো হচ্ছে। ভূমি-সহায়ক স্বাধীন দে’র পদোন্নতি হওয়ার ফলে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। এখন দাসপলাশeর ভূমি সহায়ক নিখিল ঘোষালকে দিয়ে তার অভাব পূরণ করা হচ্ছে। ৯ মাস আগে বদলি হয়ে গিয়েছেন নৈশ প্রহরী দুলাল ভল্লাও। তাঁর জায়গায় স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। উপরন্তু ৪ বছর ধরে শূন্য আমিনের পদটিও। বর্তমানে ওই দফতরের একমাত্র স্থায়ী কর্মী হলেন পিওন দিলীপ দাস। তিনি বলেন, “প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা করি।তবে আধিকারিকদের অভাবে অনেকেই ফিরে যান।”
অথচ ওই দফতরের উপরেই ঢেকা পঞ্চায়েতের ৪২টি গ্রাম-সহ সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু গ্রামের মানুষকে নির্ভর করতে হয়। এখান থেকে সাধারণ মানুষের জমির খাজনা জমা দেওয়া, আইনি মামলার তদন্ত-সহ কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার কথা। রসুনপুরের সুভাষচন্দ্র পাল, রামকৃষ্ণপুরের আবুল আহাদ শেখরা বলেন, “রাজস্ব পরিদর্শক ও ভূমি সহায়কের আসারও কোনও ঠিক থাকে না।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অস্থায়ী রাজস্ব পরিদর্শক আফজল হোসেন এবং ভূমি সহায়ক নিখিল ঘোষাল। তাঁরা বলেন, “একসঙ্গে দু’টি দফতরের কাজ চালাতে হয়। রাত পর্যন্ত কাজ করার পরেও সমস্যা মিটছে না। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুমিতচন্দ্র চন্দ্র বলেন, “সত্যিই ওই দফতরের অবস্থা শোচনীয়। আপাতত কোনও ভাড়াবাড়িতে দফতরটি সাময়িকভাবে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাড়ি সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিচারাধীন। শুধু ওই দফতরেই নয়, ব্লকেও বেশ কিছু কর্মীর অভাব রয়েছে। কিছু কর্মী নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”
কিন্তু কবে সমস্যা মিটবে তার স্পষ্ট উত্তর অবশ্য কোনও আধিকারিকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি! |