শুধু বর্ধমান জেলা নয়, গোটা রাজ্যেই যে কয়েক জায়গায় বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে তার অন্যতম পূর্বস্থলী। অথচ সেই পূর্বস্থলীতেই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত প্রধান ও দুই উপপ্রধান-সহ কয়েকশো বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দিলেন।
বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলী স্টেশন লাগোয়া মাঠে তৃণমূলের একটি সভায় আনুষ্ঠানিক দলবদল হয়। বিজেপি ছেড়ে আসা কর্মীদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ, পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ও পূর্বস্থলী ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বদরু আলম। বিজেপি-র দলছুটদের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ দাস ছাড়াও ছিলেন মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান বাবলু মণ্ডল, নিমদহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মায়া মিস্ত্রি ও পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌরী চৌধুরী। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এ দিন পাঁচশোরও বেশি বিজেপি কর্মী তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন।
বিজেপি ছেড়ে আসা নেতা তাপস দে-র দাবি, “উন্নয়নের ব্যাপারে বিজেপি নেতাদের সদিচ্ছা নেই। ওরা সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে চায়। তাই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বিজেপি অবশ্য প্রকাশ্যে এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের বর্ধমান জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকের কথায়, “যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিলেন, তাঁরা আগে তৃণমূলেই ছিলেন। তাই তাঁরা দল ছাড়ায় আমরা বিচলিত নই।” সিপিএমও বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের বক্তব্য, “বিষয়টি একান্তই বিজেপি-র নিজস্ব। তবে সিপিএম একাই লড়ে, কাউকে সঙ্গে নিয়ে নয়।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল বিজেপি। বেশ কিছু পঞ্চায়েতে তারা ক্ষমতাও দখল করে। মুকসিমপাড়া, নিমদহ ও পূর্বস্থলী এ রকমই তিনটি পঞ্চায়েত। পরের দু’টির প্রধান তৃণমূলের। একই অঙ্কে পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতিতেও ৪টি আসন দখল করে বিজেপি। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি-তৃণমূল ‘মধুচন্দ্রিমা’ ভেস্তে যায়। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি আলাদা প্রার্থী দেয়। জিততে না পারলেও, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ছাব্বিশ হাজার ভোট পান বিজেপি প্রার্থীরা।
ঘর ভাঙার সূত্রপাত হয় মাস তিনেক আগে থেকে গোষ্ঠী কোন্দলের বাড়াবাড়ি হওয়ায়। বচসা, হাতাহাতি থেকে দলীয় কার্যালয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এর পরেই বিজেপি-র একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তারই জেরে শেষমেশ এত কর্মী এক সঙ্গে দল ছাড়লেন বলে মনে করছেন জেলা বিজেপি-র একাংশ। মুকসিনপাড়ার প্রধান দল বদলানোয় এখন শুধু মাত্র কালেখাঁতলা পঞ্চায়েতেই তাদের দলের প্রধান রইল।
তবে রাজীববাবুর পাল্টা দাবি, তৃণমূল ছেড়েও অনেকে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন (বস্তুত এই কারণেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুচরিতা চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। এ ছাড়াও তৃণমূলেরই সদস্য প্রণব রায় মারা গিয়েছেন এবং বিধায়ক হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন তপনবাবু। ফলে পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্যসংখ্যা ২৬ থেকে কমে হয়েছে ২৩)। তার তালিকাও তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বিধায়ক তপনবাবুর কটাক্ষ, “আগে ওরা নিজেদের ঘর সামলাক, পরে আমাদের ঘর ভাঙাবে!”
|
দল বদলের আগে-পরে |
পঞ্চায়েত সমিতি
আসন ২৬ (নেই)
তৃণমূল ১৩ (এখন ১৪)
কংগ্রেস ৩
বিজেপি ৪ (এখন ৩)
বাম ৩ |
ব্লকে পঞ্চায়েত ১০টি
তৃণমূল প্রধান ৬ (এখন ৭)
বিজেপি প্রধান ২ (এখন ১)
বাম প্রধান ২ |
|