বাদামি পোকায় ধান খেয়ে যায়, চাষিরা কাত
কে তো পোকার উপদ্রব, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খোলা ধসা রোগের প্রকোপ। সব মিলিয়ে নাজেহাল কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, কৃষি দফতরের পরামর্শ তো দূরের কথা, কৃষি দফতরের কর্মীদের দেখাই মেলে না। কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসনিক) রবিউল হক বলেছে, “মোট কতটা জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে, তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।” কর্মীর অভাবেই সমস্যা হচ্ছে, এমনই দাবি কৃষি দফতরের।
কাটোয়ার টিকরখাজি, সুদপুর ও কুরচি, কেতুগ্রামের রাজুর, কান্দরা, মাসুন্দি এবং মঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামে ধান-জমিতে ওই পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদামি শোষক পোকার আক্রমণে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান গাছ। ধান কাটার আগেই পোকার আক্রমণ সেই সঙ্গে রোগের প্রকোপ বাড়ায় মাথায় হাত চাষিদেরও। কেতুগ্রামের রাজুর গ্রামের অনুপ মাঝি, রাইহান শেখদের দাবি, “যে সব জমিতে পোকার প্রাদুর্ভাব হয়েছে, সেখানে ধানের ফলন অন্তত ৫০ শতাংশ কমবে।”
—নিজস্ব চিত্র।
চাষিরা জানান, বাদামি রঙের শোষক পোকা দেখতে খুব ছোট। এক সঙ্গে ১৫-২০টি পোকা এক একটা গাছকে আক্রমণ করে। ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে নেয়। চোখে পড়ার আগে গাছ শুকিয়ে খড় হয়ে যায়। কুরুচি গ্রামের চাষি সুজিত ঘোষ, সুকুমার ঘোষদের আক্ষেপ, “মাত্র সাত দিনের মধ্যে ধান শুকিয়ে খড় হয়ে গিয়েছে। মাঠের যে দিকে তাকাই, এক অবস্থা।”
চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেছেন অনেকেই। পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চিন্তিত অসিত ঘোষ, রতন দাসরা। তাঁদের কথায়, “বাজার থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষ করছি। শেষ পর্যন্ত চাষ করে আদৌ ফসল উঠবে কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। মহাজনের ঋণ কী করে শোধ করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার বা অযথা বারবার জমিতে কীটনাশক দেওয়ার কারণেই বাদামি শোষক পোকা বংশবিস্তার বাড়ছে। কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতরের অধিকারিক বিপদভঞ্জন মণ্ডল বলেন, “মাকড়সা, মিরিড বাগ প্রভৃতি বন্ধু পোকা ও কিছু ছত্রাক এই পোকা দমন করতে পারে। তাই বারবার কীটনাশক দিলে বন্ধু পোকা মরে যায়, আর ওই শোষক পোকা সহজেই বংশবিস্তার করে। তাই শোষক পোকা দমনের জন্য বন্ধু পোকাদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।” শুধু পোকাই নয়, খোলা ধসা রোগের প্রকোপেও ক্ষতি হচ্ছে ধানের।
এলাকার চাষিদের অভিযোগ, কৃষি দফতরের কর্মীদের মাঠে-ঘাটে দেখা যায় না। তবে গাছ তুলে নিয়ে ব্লক কৃষি দফতরে গেলে পরামর্শ মেলে। তবে সেটা সব সময়ে সম্ভব হয় না। যদিও দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসনিক) রবিউল হকের দাবি, “প্রতি ব্লকেই কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ ফাঁকা রয়েছে। সেই কারণেই সমস্যা হচ্ছে।” তবে বিষয়টি জানতে পারার পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পোকায় যদি ধরে
লক্ষণ
১) ধানে গোল গোল দাগ। যা ‘হপার বার্ন’ নামে পরিচিত।
২) ধান শুকিয়ে যাওয়া।

নিদান
১) সন্ধ্যায় আলোর ফাঁদ তৈরি।
২) গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা।
৩) কীটনাশক, যেমন কুইনালফস ১.৫ শতাংশ বা কার্বারিল ৫ শতাংশ একরে ১০ থেকে ১২ কিলো গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
৪) বুপ্রোফেজিন ১.৫ মিলিলিটার/ লিটার হারে জলে গুলে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
ধসা যদি ধসায়
লক্ষণ
১) প্রথমে গাছের পাতায় ধূসর রঙের ক্ষত হয়।
২) ক্ষত বড় হয়ে অন্য ক্ষতের সঙ্গে মিশে যায়। অপুষ্টির কারণে ধান বড় হতে পারে না।
৩) অনেক সময়ে ধানের শিস বেরোয় না।

নিদান
১) নাট্রোজেন রয়েছে এমন সারের প্রয়োগ বন্ধ করে পটাশ সার দিতে হবে।
২) প্রতি লিটার জলে কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম এবং হেক্সাকোনাজল ১ মিলিলিটার মিশিয়ে গাছে দিতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.