কয়লা মাফিয়া শেখ সেলিম-খুনে আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার রাতে লাউদোহার নতুনডাঙার বাসিন্দা দুর্জয় বিশ্বাসকে জেরা করার জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত নিজেকে তৃণমূল সেবাদলের ব্লক সভাপতি বলে দাবি করলেও তৃণমূলের তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ধৃতের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। তার বিরুদ্ধে আগেও তোলাবাজি, ছিনতাই ও বোমাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার মাধাইগঞ্জে বাড়ি লাগোয়া পেট্রোল পাম্পের কাছে খুন হন শেখ সেলিম। মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে চম্পট দেয়। এই ঘটনায় পুলিশ আগেই ছ’জনকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু ধৃতেরা সকলেই কমবয়সী হওয়ায় তাদের পক্ষে এত বড় খুনের ছক কষা আদৌ সম্ভব কি না, সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল পুলিশ।
|
দুর্জয় বিশ্বাস।
—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশের দাবি, শেখ জনিউল নামে এক ধৃত জেরায় জানায়, দুর্জয় বিশ্বাস নাইন এমএম পিস্তল কেনার জন্য তাদের টাকা দিয়েছিল। সেলিম-খুনের ছক কষে দিয়ে ষষ্ঠীর দিন ব্যারাকপুরে চলে যায় দুর্জয়। খুনের পরে পুলিশ-প্রশাসনের উপরে প্রভাব খাটিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার আশ্বাসও সে দিয়েছিল বলে পুলিশের কাছে দাবি জনিউলের। নতুনডাঙার বাসিন্দা দুর্জয়কে বুধবার রাতে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “জেরায় ওই ব্যক্তির কথাবার্তায় যথেষ্ট অসঙ্গতি মেলে। তার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।” বৃহস্পতিবার ধৃতকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় দুর্জয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। নিজেকে সে তৃণমূল সেবাদলের ব্লক সভাপতি বলেও দাবি করে। যদিও তৃণমূল কর্মীদের মারধর, টাকা ছিনতাই, তাঁদের বাড়ির মহিলাদের টানা-হ্যাঁচড়া ও বোমা ছোড়ার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। তাকে ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতারের দাবিতে থানায় স্মারকলিপি দিয়েছিল তৃণমূল। পরে জামিনে ছাড়া পায় দুর্জয়।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেলিমের সঙ্গে সম্প্রতি তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। অন্য দিকে, দুর্জয় ইদানীং সেলিমের প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আমিনের দলবলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছিল। সেই খবর পেয়ে সেলিম তাকে সতর্ক করেন। কিন্তু দুর্জয় তাতে কর্ণপাত না করায় সেলিম ক্ষুব্ধ হন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আমিনের লোকজনের সঙ্গে দুর্জয় সেলিম খুনের চক্রান্তে জড়িয়ে পড়ে বলে অনুমান পুলিশের।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে গত বছর দুর্জয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তাঁরা সাফ জানান, তৃণমূল সেবাদলের কোনও অস্তিত্ব নেই। কাজেই আমাদের দলের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনও যোগ নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অবশ্য দাবি, “শুনেছি, তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে কয়লা মাফিয়া সেলিমের হৃদ্যতা বেড়েছিল। তাই তার খুনের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকতেই পারে।” অভিযোগ উড়িয়ে সুজিতবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “দুর্জয় বিশ্বাস ওঠাবসা করত সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে। কাজেই এমন অভিযোগ অবান্তর।” |