বুধবার মধ্যরাত থেকেই দেশের চার মেট্রো শহরে কেবল টিভিতে অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে সরকারি ভাবে। অন্তত, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশ সে রকমই। যাঁদের বাড়িতে এখনও সেট-টপ বক্স বসেনি, তাঁদের কী হবে? এখনও ধন্ধে রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ।
কেন্দ্রীয় নির্দেশ আক্ষরিক ভাবে মানা হলে ডিটিএইচ বা সেট-টপ বক্স না থাকলে টিভি ফিরে যাবে সেই আগের জমানায়। যখন টিভি মানেই স্রেফ দূরদর্শন। কারণ, একমাত্র দূরদর্শনকেই অ্যানালগ সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশের সব কটি পে চ্যানেল ব্রডকাস্টার সংস্থা ইতিমধ্যেই এমএসও-দের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ৩১ তারিখ রাত ১২টার পর থেকেই তারা অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে। সিটি, কেসিবিপি, মন্থন এবং ডিজি কলকাতার চার মাল্টি সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) অবশ্য জানাচ্ছে, ১ নভেম্বর থেকে আরও ২০-২৫ দিন পে এবং ফ্রি চ্যানেলগুলির ডিজিটাল সম্প্রচার অ্যানালগ ব্যবস্থাতেই সম্প্রচার করা হবে। স্থানীয় এমএসও এবং অপারেটরদের নিজেদের এই বন্দোবস্ত অবশ্য বেআইনি। তা নিয়ে এক এমএসও সংস্থার কর্তার বক্তব্য, “মুম্বই ছাড়া বাকি তিন মেট্রো শহরে আগামী ২০-২৫ দিন এই ব্যবস্থাই থাকবে। এ ছাড়া আমাদের উপায় নেই। তবে এই সময়ের মধ্যেই ১০০ শতাংশ ডিজিটালাইজেশন করে ফেলতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে চার এমএসও এবং অপারেটরদের দু’টি সংগঠনের সঙ্গে মঙ্গলবার বেলা দু’টোয় মহাকরণে বৈঠকে বসছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নটিও জড়িয়ে থাকায় লালবাজারের কর্তারাও থাকবেন সেখানে। সোমবার ফিরহাদ বলেন, “গোটা ব্যাপারটাই দিল্লির হাতে। আমরা শুধু অনুরোধ করতে পারি। মঙ্গলবার মুখ্যসচিব আবার কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার সচিবকে অনুরোধ জানাবেন। আমরাও এমএসও-দের অনুরোধ করছি অ্যানালগ ব্যবস্থা চালু রাখতে।” টিভির সম্প্রচার ডিজিটাল করার সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ও মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছেন আগেই। কোনওটিরই জবাব আসেনি।
কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের যুগ্মসচিব সুপ্রিয়া সাহু সোমবার জানান, চার মেট্রো এলাকায় সেট-টপ বক্স বসেছে ৮৮%-এরও বেশি টিভিতে। মুম্বইয়ে ১০০%, কলকাতায় ৮৯%, দিল্লিতে ৭৩% ও সব চেয়ে পিছিয়ে থাকা চেন্নাইয়ে ৫৯%। যদিও বাস্তবে কত বাড়িতে কেবল টিভি রয়েছে, সেই হিসেবে অনেক জল আছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে ডিজিটালাইজেশনের ধাক্কায় আসলে কত টিভি চোখে আঁধার দেখতে চলেছে, সেই হিসেবটা সরকারি হিসেবের চেয়ে ঢের বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। যাঁরা ‘ডাইরেক্ট টু-হোম’ বা ডিটিএইচ নিয়েছেন তাঁদের অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।
শুধু সম্প্রচার নয়, প্রশ্ন সেট-টপ বক্স নিয়েও। কলকাতা থেকে শ্রীরামপুর, সর্বত্রই বেশি দামে বক্স বিক্রির অভিযোগ উঠছে অপারেটরদের বিরুদ্ধে। আগে যাঁরা বলেছিলেন ৬০০ টাকা লাগবে, এখন তাঁরাই ১২০০ থেকে ২২০০ টাকা হাঁকছেন। এমএসও-দের বক্তব্য, “অপারেটররা আমাদের কাছ থেকে ৭৯৯ থেকে ৯৯৯ টাকায় যন্ত্র কিনছেন। ওই দামেই গ্রাহককে বিক্রি করতে হবে। এক পয়সাও বেশি নেওয়া যাবে না।” এই চার এমএসও-ই জানাচ্ছে, তাদের কাছে সেট-টপ বক্সের কোনও অভাব নেই। |